চিত্রাঙ্গদা
করিনু তাড়না—সরল সুদীর্ঘ দেহ
মুহূর্তেই তীরবেগে উঠিল দাঁড়ায়ে
সন্মুখে আমার—ভস্মসুপ্ত অগ্নি যথা
ঘৃতাহুতি পেয়ে, শিখারূপে উঠে উর্ধ্বে
চক্ষের নিমেষে। শুধু ক্ষণেকের তরে
চাহিলা আমার মুখপানে— রোষদৃষ্টি
মিলাল পলকে; নাচিল অধরপ্রান্তে
স্নিগ্ধ গুপ্ত কৌতুকের মৃদূহাস্যরেখা
বুঝি সে বালক-মূর্তি হেরিয়া আমার।
শিখে পুরুষের বিদ্যা, প’রে পুরুষের
বেশ, পুরুষের সাথে থেকে, এতদিন
ভুলে ছিনু যাহা, সেই মুখে চেয়ে, সেই
আপনাতে-আপনি -অটল মূর্তি হেরি',
সেই মুহূর্তেই জানিলাম মনে, নারী
আমি। সেই মূহূর্তেই প্রথম দেখিনু
সম্মুখে পুরুষ মোর।
মদন। সে শিক্ষা আমারি
সূলক্ষণে। আমিই চেতন করে দিই
একদিন জীবনের শুভ পুণ্যক্ষণে
নারীরে হইতে নারী, পুরুষে পুরুষ।
কী ঘটিল পরে?
চিত্রাঙ্গদা। সভয়বিষ্ময়কণ্ঠে
শুধানু, “কে তুমি?” শুনিনু উত্তর, “আমি
পার্থ, কুরুবংশধর।”
রহিনু দাঁড়ায়ে
চিত্রপ্রায়, ভুলে গেনু প্রণাম করিতে।
এই পার্থ! আজন্মের বিস্ময় আমার!
শুনেছিনু বটে, সত্যপালনের তরে
দ্বাদশ বৎসর বনে বনে ব্রহ্মচর্য
পালিছে অর্জুন। এই সেই পার্থবীর!
বাল্যদুরাশায় কত দিন করিয়াছি
মনে, পার্থকীর্তি করিব নিস্প্রভ আমি