সুন্দর

তখন সিন্ধু ভৈরবীতে কান্না দুলে দুলে উঠতে থাকে—

না, যেয়ো না, যেয়ো নাকো॥
মিলনপিয়াসী মোরা— কথা রাখো কথা রাখো।
আজো বকুল আপনহারা হায় রে, ফুল-ফোটানো হয় নি সারা,
সাজি ভরে নি—
পথিক ওগো থাকো থাকো॥
চাঁদের চোখে জাগে নেশা,
তার আলো গানে গন্ধে মেশা।
দেখো চেয়ে কোন্‌ বেদনায়      হায় রে     মল্লিকা ওই যায় চলে যায়
অভিমানিণী
পথিক, তাকে ডাকো ডাকো।

এই কান্নার দোল এও সেই দোলপূর্ণিমার দোল। জীবনের পরম সম্পদ চরম আশা দেখা দিয়ে যে চলে যায়। কিন্তু গেলেও সে যেতে পারে না। তার বিচ্ছেদের আলো জলে স্থলে আকাশে জ্বলে ওঠে। মন বলতে থাকে আমার বিরহের বীণা তোমাকেই নিবেদন করে দিলুম। এই বীণায় তোমার নন্দনের সুর এনে দাও। সেই নন্দনের সুর যা মর্ত্যের ওপার থেকে আসে—যেখান থেকে অরুণের আলো আসে— যেখান থেকে হঠাৎ নবজীবনের দূত দেখা দেয় মৃত্যুর তোরণ পার হয়ে।

এনেছ ওই শিরীষ বকুল আমের মুকুল সাজিখানি হাতে করে।
কবে যে সব ফুরিয়ে দেবে, চলে যাবে দিগন্তরে॥
পথিক, তোমায় আছে জানা, করব না গো তোমায় মানা—
যাবার বেলায় যেয়ো যেয়ো বিজয়মালা মাথায় পরে॥
তবু তুমি আছ যতক্ষণ
অসীম হয়ে ওঠে হিয়ায় তোমারি মিলন।
যখন যাবে তখন প্রাণে বিরহ মোর ভরবে গানে—
দূরের কথা সুরে বাজে সকল বেলা ব্যথায় ভরে॥


ও দেখা দিয়ে যে চলে গেল,     ও চুপি চুপি কী বলে গেল।
যেতে যেতে গো, কাননেতে গো      ও কত যে ফুল দলে গেল॥
মনে মনে কী ভাবে কে জানে,     মেতে আছে ও যেন কী গানে,
নয়ন হানে আকাশ পানে— চাঁদের হিয়া গলে গেল।
ও পায়ে পায়ে যে বাজায়ে চলে      বীণার ধ্বনি তৃণের দলে।
কে জানে কারে ভালো কি বাসে,     বুঝিতে নারি কাঁদে কি হাসে,
জানি নে ও কি ফিরিয়া আসে— জানি নে ও কি ছলে গেল।