শ্রাবণগাথা
জীবনমরণের সম্মিলন।

নটরাজ। আমারও মন তাই বলছে।

বজ্রে তোমার বাজে বাঁশি সে কি সহজ গান।

সেই সুরেতে জাগব আমি, দাও মোরে সেই কান।

ভুলব না আর সহজেতে,     সেই প্রাণে মন উঠবে মেতে

   মৃত্যুমাঝে ঢাকা আছে যে অন্তহীন প্রাণ।

   সে ঝড় যেন সই আনন্দে চিত্তবীণার তারে,

   সপ্তসিন্ধু দিক্-দিগন্ত জাগাও যে ঝংকারে।

আরাম হতে ছিন্ন ক’রে      সেই গভীরে লও গো মোরে

অশান্তির অন্তরে যেথায় শান্তি সুমহান॥

নটরাজ। মহারাজ, রাত্রি অবসানপ্রায়। গানে আপনার অভিনিবেশ কি ক্লান্ত হয়ে এল।

রাজা। কী বলো, নটরাজ! মন অভিষিক্ত হতে সময় লাগে। অন্তরে এখন রস প্রবেশ করেছে। আমার সভাকবির বিরস মুখ দেখে আমার মনের ভাব অনুমান কোরো না। প্রহর গণনা করে আনন্দের সীমানির্ণয়! এ কেমন কথা।!

সভাকবি। মহারাজ, দেশকালপাত্রের মধ্যে দেশও অসীম, কালও অসীম, কিন্তু আপনার পাত্রদের ধৈর্যের সীমা আছে। তোরণদ্বার থেকে চতুর্থ প্রহরের ঘণ্টা বাজল, এখন সভাভঙ্গ করলে সেটা নিন্দনীয় হবে না।

রাজা। কিন্তু তৎপূর্বে উষাসমাগমের একটা অভিনন্দন-গান হোক। নইলে ভদ্ররীতিবিরুদ্ধ হবে। যে-অন্তগমন নব অভ্যুদয়ের আশ্বাস না রেখেই যায় সে তো প্রলয়সন্ধ্যা।

নটরাজ। এ কথা সত্য। তবে এসো অরুণিকা, জাগাও প্রভাতের আগমনী। বিশ্ববেদীতে শ্রাবণের রসদানযজ্ঞ সমাধা হল। শ্রাবণ তার কমণ্ডুলু নিঃশেষ করে দিয়ে বিদায়ের মুখে দাঁড়িয়েছে। শরতের প্রথম উষার স্পর্শমণি লেগেছে আকাশে।

দেখো দেখো, শুকতারা আঁখি মেলি চায়

          প্রভাতের কিনারায়।

ডাক দিয়েছে রে শিউলি ফুলেরে—

          আয় আয় আয়।

ও যে    কার লাগি জ্বালে দীপ,

কার      ললাটে পরায় টিপ,

ও যে    কার আগমনী গায়—

          আয় আয় আয়।

          জাগো জাগো সখী,

কাহার আশায় আকাশ উঠিল পুলকি।

          মালতীর বনে বনে

          ওই শোনো ক্ষণে ক্ষণে

          কহিছে শিশিরবায়-