নবীন

দীর্ঘ শূন্য পথটাকে এতদিন ঠেকেছিল বড়ো কঠিন, বড়ো নিষ্ঠুর। আজ তাকে প্রণাম। পথিককে সে তো অবশেষে এনে পৌঁছিয়ে দিলে। কিন্তু, ভুলব কেমন করে যে, যে পথ কাছে নিয়ে আসে সেই পথই দূরে নিয়ে যায় — তাই মনে হয়, ঘরের মধ্যে নিশ্চল হয়ে মিলন স্থায়ী হয় না, পথে বেরিয়ে পড়লে তবেই পথিকের সঙ্গে বিচ্ছেদ এড়ানো যায়। তাই আজ পথকেই প্রণাম।

মোর   পথিকেরে বুঝি এনেছ এবার

করুণ রঙিন পথ।

এসেছে এসেছে অঙ্গনে, মোর

দুয়ারে লেগেছে রথ।

     সে-যে    সাগরপারের বাণী

মোর   পরানে দিয়েছে আনি,

তার   আঁখির তারায় যেন গান গায়

অরণ্য পর্বত।

        দুঃখসুখের এপারে ওপারে

দোলায় আমার মন,

        কেন অকারণ অশ্রুসলিলে

ভরে যায় দু'নয়ন।

ওগো   নিদারুণ পথ, জানি,

জানি,   পুন নিয়ে যাবে টানি

তারে,   চিরদিন মোর যে দিল ভরিয়া

যাবে সে স্বপনবৎ॥

বাতাসের চলার পথে যে মুকুল পড়ে ঝরে,

তা নিয়ে তোমার লাগি রেখেছি ডালি ভরে।

টুকরো টুকরো সুখদুঃখের মালা গাঁথব — সাতনরী হার পরাব তোমাকে মাধুর্যের মুক্তোগুলি চুনে নিয়ে। ফাগুনের ভরা সাজির উদ্‌বৃত্ত থেকে তুলে নেব বনের মর্মর, বাণীর সূত্রে গেঁথে বেঁধে দেব তোমার মণিবন্ধে। হয়তো আবার আর-বসন্তেও সেই আমার দেওয়া ভূষণ প'রেই তুমি আসবে। আমি থাকব না, কিন্তু কী জানি আমার দানের ভূষণ হয়তো থাকবে তোমার দক্ষিণ হাতে।

ফাগুনের নবীন আনন্দে

গানখানি গাঁথিলাম ছন্দে।

দিল তারে বনবীথি

কোকিলের কলগীতি,

ভরি দিল বকুলের গন্ধে।