শ্রাবণগাথা

ভূর্জপাতায় নবগীত করো রচনা,

মেঘমল্লার রাগিণী;

এসেছে বরষা ওগো নব অনুরাগিণী।

কেতকীকেশরে কেশপাশ করো সুরভি,

ক্ষীণ কটিতটে গাঁথি লয়ে পরো করবী,

কদম্বরেণু বিছাইয়া দাও শয়নে,

অঞ্জন আঁকো নয়নে।

তালে তালে দুটি কঙ্কণ কনকনিয়া

ভবনশিখীরে নাচাও গণিয়া গণিয়া

স্মিতবিকশিত বয়নে,

কদম্বরেণু বিছাইয়া ফুলশয়নে।

এসেছে বরষা, এসেছে নবীন বরষা,

গগন ভরিয়া এসেছে ভুবনভরসা,

দুলিছে পবনে সনসন বনবীথিকা,

গীতময় তরুলতিকা।

শতেক যুগের কবিদলে মিলি আকাশে

ধ্বনিয়া তুলিছে গন্ধমদির বাতাসে

শতেক যুগের গীতিকা,

শত-শত গীত-মুখরিত বনবীথিকা॥

নটরাজ। ওগো কমলিকা, এখন তবে শুরু করো তোমাদের পালা।

রাজা। কী দিয়ে শুরু করবে।

নটরাজ। বনভূমির আত্মনিবেদন দিয়ে।

রাজা। কার কাছে আত্মনিবেদন।

নটরাজ। আকাশপথে যিনি এসেছেন অতিথি— আবির্ভাব যাঁর অরণ্যের রাসমঞ্চে, পূর্বদিগন্তে উড়েছে যাঁর কেশকলাপ।

সভাকবি। ওহে নটরাজ, আমরা আধুনিক কালের কবি— ফুলকাটা বুলি দিয়ে আমরা কথা কই নে— তুমি যেটা অত করে ঘুরিয়ে বললে, আমরা সেটাকে সাদা ভাষায় বলে থাকি বাদলা।

নটরাজ। বাদলা নামে রাজপথের ধুলোয়, সেটাকে দেয় কাদা ক’রে। বাদলা নামে রাজপ্রহরীদের পাগড়ির ’পরে, তার পাকে পাকে জমিয়ে তোলে কফের প্রকোপ। আমি যাঁর কথা বলছি তিনি নামেন ধরণীর প্রাণমন্দিরে, বিরহীর মর্মবেদনায়।

রাজা। তোমাদের দেশের লোক কথা জমাতে পারে বটে।

সভাকবি। ওঁদের শব্দ আছে বিস্তর, কিন্তু মহারাজ, অর্থের বড়ো টানাটানি।

নটরাজ। নইলে রাজদ্বারে আসব কোন্‌ দুঃখে। এইবার শুরু করো।