সংযোজনী
১৮০৫ শকের ভাদ্র মাসে (১১ সেপ্টেম্বর ১৮৮৩ ) ‘বিবিধ প্রসঙ্গ’ পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়। তৎপূর্ব্বে ইহার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রসঙ্গগুলি ১২৮৮ ও ১২৮৯ সালের ‘ভারতী’তে বাহির হইয়াছিল। কেবল শেষ প্রবন্ধ “সমাপন” নূতন সংযোজন। পুস্তকাকারে প্রকাশের সময় ‘ভারতী’র কোনো কোনো অংশ পরিত্যক্ত হয়;সেগুলি নিমেন নির্দিষ্ট ও সংযোজিত হইল। একেবারে প্রারম্ভে একটু ভূমিকার মত ছিল।—

স্মরণ হইতেছে, ফরাসীস পন্ডিত প্যাস্কাল একজনকে একটি দীর্ঘ পত্র লিখিয়া অবশেষে উপসংহারে লিখিয়াছিলেন, —”মার্জ্জনা করিবেন, সময় অল্প থাকাতে বড় চিঠি লিখিতে হইল,ছোট চিঠি লিখিবার সময় নাই।” আমাদের হাতে যখন বিশেষ সময় থাকিবে তখন মাঝে মাঝে সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধ পাঠকদের উপহার দিব।

—ভারতী, শ্রাবণ ১২৮৮, বিবিপ্রসঙ্গ, পৃ ১৯০

 

“অনধিকার” ও “অধিকার” প্রসঙ্গের পরে “উপভোগ” শীর্ষক একটি প্রসঙ্গ ছিল। তাহা এই —


উপভোগ
মনুষ্যের যতদুর উপভোগ করিবার, অধিকার করিবার ক্ষমতা আছে, স্পর্শেই তাহার চূড়ান্ত। যাহাকে সে স্পর্শ করিতে পারে তাহাকেই সে সর্বাপেক্ষা আয়ত্ত মনে করে। এই নিমিত্ত ঋষিরা আয়ত্ত পদার্থকে “করতলন্যস্ত আমলকবৎ” বলিতেন। এই জন্য মানুষেরা ভোগ্য পদার্থকে প্রাণপণে স্পর্শ করিতে চায়। স্পর্শ করিতে পারাই তাহাদের অভিলাষের উপসংহার। আমাদের হৃদয়ে স্পর্শের ক্ষুধা চির জাগ্রত, এই জন্য যাহা আমরা স্পর্শ করিতে পারি তাহার ক্ষুধা আমাদের শীঘ্র মিটিয়া যায়, যাহা স্পর্শ করিতে পারি না তাহার ক্ষুধা আর শীঘ্র মেটে না। কমলাকান্ত চক্রবর্তী তাঁহার দ্বাদশসংখ্যক দপ্তরে একটি গীতের ব্যাখ্যা করিয়াছেন,সেই গীতের একস্থলে আছে —
“মণি নও মাণিক নও যে হার করে‌ গলে পরি,
ফুল নও যে কেশের করি বেশ।”

ইহা মনুষ্যহৃদয়ের কাতর ক্রন্দন। তোমার ঐ রূপ যাহা দেখিতে পাইতেছি,তোমার ঐ হৃদয় যাহা অনুভব করিতে পারিতেছি, উহা যদি মণির মত মাণিকের মত হইত, উহা যদি হার করিয়া গলায় পরিতে পারিতাম, বুকের কাছে উহার স্পর্শ অনুভব করিতে পারিতাম, আহা, তাহা হইলে কি হইত! উহার অর্থ এমন নহে যে “বিধাতা জগৎ জড়ময় করিয়াছেন কেন? রূপ জড় পদার্থ কেন? আমরা যখন বঁধুকে স্পর্শ করি, তখন তাহার দেহ স্পর্শ করি মাত্র। তাহার দেহের কোমলতা, শীতোষ্ণতা অনুভব করিতে পারি মাত্র। কিন্তু তাহার রূপ স্পর্শ করিতে পারি না ত, তাহার রূপ অনুভব করিতে পারি না ত। রূপ দৃশ্য হইল কেন, রূপ মণি মাণিকের মত স্পৃশ্য হইল না কেন? তাহা হইলে আমি রূপের হার করিতাম,রূপ দিয়া কেশের বেশ করিতাম। যখন কবিরা অশরীরী পদার্থকে শরীরবদ্ধ করেন, তখন আমরা এত আনন্দ লাভ করি কেন? কবির কল্পনা-বলে মুহুর্ত্তে আমাদের মনে হয় যেন তাহার শরীর আছে, যেন তাহাকে আমরা স্পর্শ করিতেছি। আমাদের বহুদিনের আকুল তৃষা যেন আজ মিটিল। যখন রাধিকা শ্যামের মুখ