বন-ফুল
তাকায়ে রহিত মোর মুখপানে হায়!
তাদের করিয়া ত্যাগ যাইব কোথায়?
যাইব স্বরগভূমে,    আহা হা! ত্যজিয়া ঘুমে
এতক্ষণে উঠেছেন জননী আমার—
এতক্ষণে ফুল তুলি         গাঁথিছেন মালাগুলি,
শিশিরে ভিজিয়া গেছে আঁচল তাঁহার—
সেথাও হরিণ আছে,         ফুল ফুটে গাছে গাছে,
সেখানেও শুক পাখি ডাকে ধীরে ধীরে!
সেথাও কুটীর আছে,         নদী বহে কাছে কাছে,
পূর্ণ হয় সরোবর নির্ঝরের নীরে।
আইস! আইস দেব! যাই ধীরে ধীরে!
আয় পাখি! আয় আয়!      কার তরে রবি হায়,
উড়ে যা উড়ে যা পাখি! তরুর শাখায়!
প্রভাতে কাহারে পাখি!      জাগাবি রে ডাকি ডাকি
‘কমলা!’ ‘কমলা!’ বলি মধুর ভাষায়?
ভুলে যা কমলা নামে,        চলে যা সুখের ধামে,
‘কমলা!’ ‘কমলা!’ ব'লে ডাকিস নে আর।
চলিনু তোদের ছেড়ে,        যা শুক শাখায় উড়ে—
চলিনু ছাড়িয়া এই কুটীরের দ্বার।
তবু উড়ে যাবি নে রে,       বসিবি হাতের ‘পরে?
আয় তবে, আয় পাখি, সাথে সাথে আয়,
পিতার হাতের ‘পরে        আমার নামটি ধ'রে—
আবার আবার তুই ডাকিস সেথায়।
আইস পথিক তবে কাল বহে যায়”।
সমীরণ ধীরে ধীরে        চুম্বিয়া তটিনীনীরে
দুলাইতে ছিল আহা লতায় পাতায়—
সহসা থামিল কেন প্রভাতের বায়?
সহসা রে জলধর     নব অরুণের কর
কেন রে ঢাকিল শৈল অন্ধকার করে?
পাপিয়া শাখার ‘পরে  ললিত সুধীর স্বরে
তেমনি কর-না গান, থামিলি কেন রে?