বন-ফুল
গাছ পালা পুষ্প লতা করিছে বর্ষণ!
হোথা বরফের রাশি,         মৃত দেহ রেখে আসি
হিমানীক্ষেত্রের মাঝে করায়ে শয়ান,
এই লয়ে যাই চ'লে,         মুছে ফেল অশ্রুজলে—
অশ্রুবারিধারে আহা পূরেছে নয়ান!’
পথিক এতেক কয়ে         মৃত দেহ তুলে লয়ে
হিমানীক্ষেত্রের মাঝে করিল প্রোথিত।
কুটীরেতে ধীরি ধীরি         আবার আইল ফিরি,
কত ভাবে পথিকের চিত্ত আলোড়িত।
ভবিষ্যৎ-কলপনে        কত কি আপন মনে
দেখিছে, হৃদয়পটে আঁকিতেছে কত—
দেখে পূর্ণচন্দ্র হাসে         নিশিরে রজতবাসে
ঢাকিয়া, হৃদয় প্রাণ করি অবারিত—
জাহ্নবী বহিছে ধীরে,         বিমল শীতল নীরে
মাখিয়া রজতরশ্মি গাহি কলকলে—
হরষে কম্পিত কায়,         মলয় বহিয়া যায়
কাঁপাইয়া ধীরে ধীরে কুসুমের দলে—
ঘাসের শয্যার 'পরে         ঈষৎ হেলিয়া পড়ে
শীতল করিছে প্রাণ শীত সমীরণ—
কবরীতে পুষ্পভার         কে ও বাম পাশে তার,
বিধাতা এমন দিন হবে কি কখন?
অদৃষ্টে কি আছে আহা!      বিধাতাই জানে তাহা
যুবক আবার ধীরে কহিল বালায়,
‘কিসের বিলম্ব আর?        ত্যজিয়া কুটীরদ্বার
আইস আমার সাথে, কাল বহে যায়!’
তুলিয়া নয়নদ্বয়     বালিকা সুধীরে কয়,
বিষাদে ব্যাকুল আহা কোমল হৃদয়—
‘কুটীর! তোদের সবে       ছাড়িয়া যাইতে হবে,
পিতার মাতার কোলে লইব আশ্রয়।
হরিণ! সকালে উঠি         কাছেতে আসিত ছুটি,
দাঁড়াইয়া ধীরে ধীরে আঁচল চিবায়—
ছিঁড়ি ছিঁড়ি পাতাগুলি        মুখেতে দিতাম তুলি