বন-ফুল
চমকি
ক্ষণেক-পরে
কহিল সুধীর স্বরে
বিমোহিত পান্থবর কমলাবালায়,
‘সুন্দরি, আমি গো পান্থ
দিক্ভ্রান্ত পথশ্রান্ত
উপস্থিত হইয়াছি বিজন কাননে!
কাল হতে ঘুরি
ঘুরি
শেষে এ কুটীরপুরী
আজিকার নিশিশেষে পড়িল নয়নে!
বালিকা! কি কব
আর, আশ্রয় তোমার দ্বার
পান্থ পথহারা আমি করি গো প্রার্থনা।
জিজ্ঞাসা করি গো
শেষে মৃতে
লয়ে ক্রোড়দেশে
কে তুমি কুটীরমাঝে বসি সুধাননা?’
পাগলিনীপ্রায়
বালা
হৃদয়ে পাইয়া জ্বালা
চমকিয়া বসে যেন জাগিয়া স্বপনে।
পিতার
বদন-‘পরে
নয়ন নিবিষ্ট ক'রে
স্থির হ'য়ে বসি রয় ব্যাকুলিত মনে।
নয়নে সলিল
ঝরে,
বালিকা সমুচ্চ স্বরে
বিষাদে ব্যাকুলহৃদে কহে ‘পিতা— পিতা’।
কে দিবে উত্তর
তোর,
প্রতিধ্বনি শোকে ভোর
রোদন করিছে সেও বিষাদে তাপিতা।
ধরিয়া পিতার
গলে
আবার বালিকা বলে
উচ্চৈস্বরে “পিতা— পিতা”, উত্তর না পায়!
তরুণী পিতার
বুকে
বাহুতে ঢাকিয়া মুখে,
অবিরল নেত্রজলে বক্ষ ভাসি যায়।
শোকানলে জল
ঢালা
সাঙ্গ হ'লে উঠে বালা,
শূন্য মনে উঠি বসে আঁখি অশ্রুময়!
বসিয়া বালিকা
পরে
নিরখি পথিকবরে
সজল নয়ন মুছি ধীরে ধীরে কয়,
‘কে তুমি জিজ্ঞাসা করি, কুটীরে এলে কি করি—
আমি যে পিতারে ছাড়া জানি না কাহারে!
পিতার পৃথিবী
এই,
কোনদিন কাহাকেই
দেখি নি তো এখানে এ কুটীরের দ্বারে!
কোথা হতে তুমি আজ আইলে
পৃথিবীমাঝ?