বন-ফুল
কুটীর গম্ভীরে কহে ‘সুন্দরি! সুন্দরি! ’
তবুও উত্তর নাই,             নীরব সকল ঠাঁই,
 এখনো পৃথিবী ধরা নীরবে ঘুমায়!
নীরব পরণশালা,              নীরব ষোড়শী বালা,
নীরবে সুধীর বায়ু লতারে দুলায়!
পথিক চমকি প্রাণে           দেখিল চৌদিক-পানে—
কুটীরে ডাকিছে কেও “কমলা! কমলা!’
অবাক্‌ হইয়া রহে,            অস্ফুটে কে ওগো কহে?
সুমধুর স্বরে যেন বালকের গলা!
পথিক পাইয়া ভয়,           চমকি দাঁড়ায়ে রয়,
কুটীরের চারি ভাগে নাই কোনজন!
এখনো অস্ফুটস্বরে     ‘কমলা! কমলা!’ ক'রে
কুটীর আপনি যেন করে সম্ভাষণ!
কে জানে কাহাকে ডাকে,    কে জানে কেন বা ডাকে,
কেমনে বলিব কেবা ডাকিছে কোথায়?
সহসা পথিকবর      দেখে দণ্ডে করি ভর
‘কমলা! কমলা!’   বলি শুক গান গায়!
আবার পথিকবর     হন ধীরে অগ্রসর,
‘সুন্দরি! সুন্দরি!’    বলি ডাকিয়া আবার!
আবার পথিক হায়    উত্তর নাহিক পায়,
বসিল ঊরুর ‘পরে সঁপি দেহভার!
সঙ্কোচ করিয়া কিছু   পান্থবর আগুপিছু
একটু একটু করে হন অগ্রসর!
আনমিত করি শিরে    পথিকটি ধীরে ধীরে
বালার নাসার কাছে সঁপিলেন কর!
হস্ত কাঁপে থরথরে,      বুক ধুক্‌ ধুক্‌ করে,
পড়িল অবশ বাহু কপোলের ‘পর—
লোমাঞ্চিত কলেবরে      বিন্দু বিন্দু ঘর্ম ঝরে,
কে জানে পথিক কেন টানি লয় কর!
আবার কেন কি জানি     বালিকার হস্তখানি
লইলেন আপনার করতল-'পরি—
তবুও বালিকা হায়         চেতনা নাহিক পায়—