বৈকুন্ঠের খাতা

বৈকুণ্ঠ। তুমিও বোসো-না বাপু, পরিবেশনের ব্যবস্থা আমি করছি।

তিনকড়ি। ব্যস্ত হবেন না মশায়, নিজে আগে খেয়ে নিয়েছি।

কেদার। দূর লক্ষ্মীছাড়া পেটুক!

তিনকড়ি। ভাই, তিনকড়ের ভাগ্যে বিঘ্নি ঢের আছে বরাবর দেখে আসছি। জন্মাবামাত্র দুধ খাবার জন্যে কান্না ধরলুম, তার
ঠিক পূর্বেই মা গেল মরে। ভাই, সবুর করতে আর সাহস হয় না।

অবিনাশ। এ ছোকরাটিকে কোথায় জোগাড় করলে কেদার?

কেদার। ওর নাম কী, দেশদেশান্তর খুঁজতে হয় নি, আপনি জুটেছে। এখন এঁকে থোব কোথায়, কী বলে ভালো, তাই খুঁজছি।

অবিনাশ। দাদা, তা হলে তুমি এখন খেতে যাও।

বৈকুণ্ঠ। বিলক্ষণ! আগে এঁদের হোক।

কেদার। সে কী কথা বৈকুণ্ঠবাবু—

বৈকুণ্ঠ। কেদারবাবু, আপনি কিছু সংকোচ করবেন না, খেতে দেখতে আমার বড়ো আনন্দ।

তিনকড়ি। বেশ তো, আবার কাল দেখবেন। আমরা তো পালাচ্ছি নে। কিছুতেই না।

কেদার। তিনকড়ে, বরঞ্চ তুই ঐ চাঙারিটা বাড়ি নিয়ে চল্‌। কী বলে, এঁদের আর কেন মিছে বিরক্ত করা।

তিনকড়ি। আজ তো আর দরকার দেখি নে। আবার কাল আছে।

[ অবিনাশের হাস্য

 

বৈকুণ্ঠ। এ ছোকরাটি বেশ কথা কয়। একে আমার বড়ো ভালো লাগছে। কিন্তু আহারটা এইখানেই করতে হচ্ছে, সে আমি কিছুতেই ছাড়ছি নে—

 

ঈশানের প্রবেশ

ঈশান। বাবু!

বৈকুণ্ঠ। আরে, শুনেছি, এই যে যাচ্ছি। আপনারা তা হলে যাবেন দেখছি। তবে আর ধরে রাখব না।

তিনকড়ি। আজ্ঞে না, তা হলে বিপদে পড়বেন।

[ বৈকুণ্ঠ অবিনাশ ও ঈশানের প্রস্থান

 

(কেদারের প্রতি) এই নে ভাই, টাকা-কটা বেঁচেছে—এ জিনিস আমার হাতে টেকে না।

কেদার। তোর বাবা তোর নাম দিয়েছে তিনকড়ি, আমি তোকে ডাকব মানিক। লাখো টাকা তোর দাম।