শেষের কবিতা
ঘটকালি

অমিত যোগমায়ার কাছে এসে বললে, “মাসিমা, ঘটকালি করতে এলেম। বিদায়ের বেলা কৃপণতা করবেন না।”

“পছন্দ হলে তবে তো। আগে নাম ধাম বিবরণটা বলো।”

অমিত বললে, “নাম নিয়ে পাত্রটির দাম নয়।”

“তা হলে ঘটক-বিদায়ের হিসাব থেকে কিছু বাদ পড়বে দেখছি।”

“অন্যায় কথা বললেন। নাম যার বড়ো তার সংসারটা ঘরে অল্প, বাইরেই বেশি। ঘরের মন-রক্ষার চেয়ে বাইরে মান-রক্ষাতেই তার যত সময় যায়। মানুষটার অতি অল্প অংশই পড়ে স্ত্রী ভাগে, পুরো বিবাহের পক্ষে সেটুকু যথেষ্ট নয়। নামজাদা মানুষের বিবাহ স্বল্পবিবাহ, বহুবিবাহের মতোই গর্হিত।”

“আচ্ছা, নামটা নাহয় খাটো হল, রূপটা?”

“বলতে ইচ্ছে করি নে, পাছে অত্যুক্তি করে বসি।”

“অত্যুক্তির জোরেই বুঝি বাজারে চালাতে হবে?”

“পাত্র-বাছাইয়ের বেলায় দুটি জিনিস লক্ষ করা চাই– নামের দ্বারা বর যেন ঘরকে ছাড়িয়ে না যায়, আর রূপের দ্বারা কনেকে।”

“আচ্ছা নামরূপ থাক্‌, বাকিটা?”

“বাকি যেটা রইল সব-জড়িয়ে সেটাকে বলে পদার্থ। তা লোকটা অপদার্থ নয়।”

“বুদ্ধি?”

“লোকে যাতে ওকে বুদ্ধিমান ব’লে হঠাৎ ভ্রম করে সেটুকু বুদ্ধি ওর আছে।”

“বিদ্যে?”

“স্বয়ং নিউটনের মতো। ও জানে যে, জ্ঞানসমুদ্রের কূলে সে নুড়ি কুড়িয়েছে মাত্র। তাঁর মতো সাহস করে বলতে পারে না, পাছে লোকে ফস করে বিশ্বাস করে বসে।”

“পাত্রের যোগ্যতার ফর্দটা তো দেখছি কিছু খাটো গোছের।”

“অন্নপূর্ণার পূর্ণতা প্রকাশ করতে হবে বলেই শিব নিজেকে ভিখারি কবুল করেন, একটুও লজ্জা নেই।”

“তা হলে পরিচয়টা আরো একটু স্পষ্ট করো।”

“জানা ঘর। পাত্রটির নাম অমিতকুমার রায়। হাসছেন কেন মাসিমা? ভাবছেন কথাটা ঠাট্টা?”

“সে ভয় মনে আছে বাবা, পাছে শেষ পর্যন্ত ঠাট্টাই হয়ে ওঠে।”

“এ সন্দেহটা পাত্রের ’পরে দোষারোপ।”

“বাবা, সংসারটাকে হেসে হালকা করে রাখা কম ক্ষমতা নয়।”

“মাসি, দেবতাদের সেই ক্ষমতা আছে, তাই দেবতারা বিবাহের অযোগ্য, দময়ন্তী সে কথা বুঝেছিলেন।”

“আমার লাবণ্যকে সত্যি কি তোমার পছন্দ হয়েছে?”

“কিরকম পরীক্ষা চান, বলুন।”