শেষের কবিতা

          কোন্‌ অন্ধক্ষণে

       বিজড়িত তন্দ্রা-জাগরণে

    রাত্রি যবে সবে হয় ভোর,

         মুখ দেখিলাম তোর।

চক্ষু-’পরে চক্ষু রাখি শুধালেম, কোথা সংগোপনে

    আছ আত্মবিস্মৃতির কোণে।

নিজেকেই ভুলে থাকার মতো কোনো এমন ঝাপসা কোণ আর নেই। সংসারে কত যে দেখবার ধন দেখা হল না, তারা আত্মবিস্মৃতির কোণে মিলিয়ে আছে। তাই বলে তো হাল ছেড়ে দিলে চলে না।

      তোর সাথে চেনা

       সহজে হবে না–

    কানে কানে মৃদুকণ্ঠে নয়।

      করে নেব জয়

    সংশয়কুণ্ঠিত তোর বাণী–

      দৃপ্ত বলে লব টানি

   শঙ্কা হতে, লজ্জা হতে, দ্বিধা দ্বন্দ্ব হতে

      নির্দয় আলোতে।

একেবারে নাছোড়বান্দা। কতবড়ো জোর। দেখেছেন রচনার পৌরুষ।

    জাগিয়া উঠিবি অশ্রুধারে,

    মুহূর্তে চিনিবি আপনারে,

        ছিন্ন হবে ডোর–

    তোরে মুক্তি দিয়ে তবে মুক্তি হবে মোর।

ঠিক এই তানটি আপনার নামজাদা লেখকের মধ্যে পাবেন না, সূর্যমণ্ডলে এ যেন আগুনের ঝড়। এ শুধু লিরিক নয়, এ নিষ্ঠুর জীবনতত্ত্ব।” –লাবণ্যর মুখের দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে বললে–

          “হে অচেনা,

      দিন যায়, সন্ধ্যা হয়, সময় রবে না,

          তীব্র আকস্মিক

      বাধা বন্ধ ছিন্ন করি দিক,

   তোমারে চেনার অগ্নি দীপ্তশিখা উঠুক উজ্জ্বলি,

      দিব তাহে জীবন অঞ্জলি।”

আবৃত্তি শেষ হতে-না-হতেই অমিত লাবণ্যর হাত চেপে ধরলে। লাবণ্য হাত ছাড়িয়ে নিলে না। অমিতর মুখের দিকে চাইলে, কিছু বললে না।

এর পরে কোনো কথা বলবার কোনো দরকার হল না। লাবণ্য ঘড়ির দিকে চাইতেও ভুলে গেল।