বস্তুগত ও ভাবগত কবিতা

কোথা হইতে বাতাস উদাস হইয়া বাহির হইল, কোথায় সে যাইবে তাহার ঠিক নাই, অতি ভয়ে ভয়ে অতি ধীরে ধীরে তাহার পদক্ষেপ। কোকিল কোথা হইতে সহসা ডাকিয়া উঠিল এবং তাহার স্বর কোথায় যে মিলাইয়া গেল তাহার ঠিকানা পাওয়া গেল না। এক দিকে উপভোগ করিতেছি আর-এক দিকে তৃপ্তি হইতেছে না, কেননা উপভোগ্য সামগ্রীসকল আমাদের আয়ত্তের মধ্যে নহে। এক দিকে মাত্র সীমা, অন্য দিকে অসীম সমুদ্র। মনে হয়, যদি ঐ সমুদ্র পার হইতে পারি, তবে আমাদের বিশ্রামের রাজ্যে, সুখের রাজ্যে গিয়া পৌঁছাই। যদি জ্যোৎস্নাকে, যদি ফুলের গন্ধকে, যদি সঙ্গীতকে ও বসন্তের বাতাসকে পাই, তবে আমাদের সুখের সীমা থাকে না। এই জন্যই যখন কবিরা জ্যোৎস্না, সঙ্গীত, পুষ্পের গন্ধকে শরীরবদ্ধ করেন, তখন আমাদের এক প্রকার আরাম অনুভব হয়; মনে হয় যেন এইরূপই বটে, যেন এইরূপ হইলেই ভাল হয়!

So, young muser, I sat listening

To my Fancy’s wildest word –

On a sudden, through the glistening

Leaves around a little stirred,

Came a sound, a sense of music,

Which was rather felt than heard.

Softly, finely, it enwound me –

From the world it shut me in –

Like a fountain falling round me

Which with silver water thin

Holds a little marble Naiad.

sitting smilingly within.

সংগীত যদি এইরূপ নির্ঝর হইত ও আমরা যদি তাহার মধ্যে বসিতে পারিতাম, তাহা হইলে কি আনন্দই হইত! মুহূর্ত্তের জন্য কল্পনা করি যেন এইরূপই হইতেছে, এইরূপই হয়!

পৃথিবীতে নাকি সকল সুখই প্রায় উপভোগ করিয়াই ফুরাইয়া যায় ও অবশেষে অসন্তোষ মাত্র অবশিষ্ট থাকে; এইজন্যই যে সুখ আমরা ভালো করিয়া পাই না, যে সুখ আমরা শেষ করিতে পারি না, মনে হয় যেন সেই সুখ যদি পাইতাম তবেই আমরা সন্তুষ্ট হইতাম। এমন লোক দেখা গিয়াছে যে দূর হইতে সুকণ্ঠ শুনিয়া প্রেমে পড়িয়া গিয়াছে। কেননা তাহার মন এই বলে যে, অমন যাহার গলা না-জানি তাহাকে কেমন দেখিতে ও তাহার মনটিও কত কোমল হইবে! ভালো করিয়া দেখিলে পৃথিবীর দ্রব্যে নাকি নানা প্রকার অসম্পূর্ণতা দেখা যায়। কাহারও বা গলা ভালো, মন ভালো নহে, নাক ভালো, চোখ ভালো নহে– তাই আমরা বড়ো বিরক্ত, বড়ো অসন্তুষ্ট হইয়া আছি! সেই জন্যই দূর হইতে আমরা আধখানা ভাল দেখিলে তাড়াতাড়ি আশা করিয়া বসি বাকিটুকু নিশ্চয়ই ভালো হইবে। ইহা যদি সত্য হয় তবে দূরেই থাকি-না কেন, কল্পনায় পূর্ণতার প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করি-না কেন –রক্ত মাংসের অত কাছে ঘেঁষিবার আবশ্যক কী; শরীর ও আয়তন যতই কম দেখি, অশরীরী ভাব যতই কল্পনা করি, বস্তুগত কবিতা যতই কম আহার করি ও ভাবগত কবিতা যতই সেবন করি, ততই তো ভালো।