আগমনী

আয়োজন চলেইছে। তার মাঝে একটুও ফাঁক পাওয়া যায় না যে ভেবে দেখি, কিসের আয়োজন।

তবুও কাজের ভিড়ের মধ্যে মনকে এক-একবার ঠেলা দিয়ে জিজ্ঞাসা করি, “কেউ আসবে বুঝি?”

মন বলে, “রোসো। আমাকে জায়গা দখল করতে হবে, জিনিসপত্র জোগাতে হবে, ঘরবাড়ি গড়তে হবে, এখন আমাকে বাজে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা কোরো না।”

চুপচাপ করে আবার খাটতে বসি। ভাবি, জায়গা-দখল সারা হবে, জিনিসপত্র সংগ্রহ শেষ হবে, ঘরবাড়ি-গড়া বাকি থাকবে না, তখন শেষ জবাব মিলবে।

জায়গা বেড়ে চলেছে, জিনিসপত্র কম হল না, ইমারতের সাতটা মহল সারা হল। আমি বললেম, “এইবার আমার কথার একটা জবাব দাও।”

মন বলে, “আরে রোসো, আমার সময় নেই।”

আমি বললেম, “কেন, আরো জায়গা চাই? আরো ঘর? আরো সরঞ্জাম? ”

মন বললে, “চাই বৈকি।”

আমি বললেম, “এখনো যথেষ্ট হয় নি? ”

মন বললে, “এতটুকুতে ধরবে কেন।”

আমি জিজ্ঞাসা করলেম, “কী ধরবে। কাকে ধরবে।”

মন বললে, “সে-সব কথা পরে হবে।”

তবু আমি প্রশ্ন করলেম, “সে বুঝি মস্ত বড়ো? ”

মন উত্তর করলে, “বড়ো বৈকি।”

এত বড়ো ঘরেও তাকে কুলোবে না, এত মস্ত জায়গায়! আবার উঠে-পড়ে লাগলেম। দিনে আহার নেই, রাত্রে নিদ্রা নেই। যে দেখলে সেই বাহবা দিলে; বললে, “কাজের লোক বটে।”

এক-একবার কেমন আমার সন্দেহ হতে লাগল, বুঝি মন বাঁদরটা আসল কথার জবাব জানে না।

সেইজন্যেই কেবল কাজ চাপা দিয়ে জবাবটাকে সে ঢাকা দেয়। মাঝে মাঝে এক-একবার ইচ্ছা হয়, কাজ বন্ধ করে কান পেতে শুনি পথ দিয়ে কেউ আসছে কি না। ইচ্ছা হয়, আর ঘর না বাড়িয়ে ঘরে আলো জ্বালি, আর সাজ-সরঞ্জাম না জুটিয়ে ফুল-ফোটার বেলা থাকতে একটা মালা গেঁথে রাখি।

কিন্তু, ভরসা হয় না। কারণ, আমার প্রধান মন্ত্রী হল মন। সে দিনরাত তার দাঁড়িপাল্লা আর মাপকাঠি নিয়ে ওজন-দরে আর গজের মাপে সমস্ত জিনিস যাচাই করছে। সে কেবলই বলছে, “আরো না হলে চলবে না।”

“কেন চলবে না।”

“সে যে মস্ত বড়ো।”

“কে মস্ত বড়ো।”