রাজা
           এসো হে, এসো হে, এসো হে, আমার
                বসন্ত এসো।
এসো   ঘনপল্লবপুঞ্জে—
           এসো হে, এসো হে, এসো হে।
এসো   বনমল্লিকাকুঞ্জে
           এসো হে, এসো হে, এসো হে।
মৃদু   মধুর মদির হেসে
এসো   পাগল হাওয়ার দেশে,
তোমার   উতলা উত্তরীয়
তুমি   আকাশে উড়ায়ে দিয়ো—
           এসো হে, এসো হে, এসো হে, আমার
                বসন্ত এসো।
[ সকলের প্রস্থান
নাগরিকদল

প্রথম। যা বলিস ভাই, আজকের দিনটাতে আমাদের রাজার দেখা দেওয়া উচিত ছিল। তার রাজ্যে বাস করছি, একদিনও তাকে দেখলুম না, এ কি কম দুঃখের কথা।

দ্বিতীয়। ওর ভিতরকার কথাটা তোরা কেউ জানিস নে। কাউকে যদি না বলিস তো বলি।

প্রথম। এক পাড়াতেই তো বসত করছি; কবে কার কথা কাকে বলেছি। ঐ-যে তোমাদের রাহকদাদা কুয়ো খুঁড়তে খুঁড়তে গুপ্তধন পেলে, সে কি আমি সাধ করে ফাঁস করেছি। সব তো জান।

দ্বিতীয়। জানি বৈকি, সেইজন্যেই তো বলছি— কথাটা যদি চেপে রাখতে পার তো বলি, নইলে বিপদ ঘটতে পারে।

তৃতীয়। তুমিও তো আচ্ছা লোক হে বিরূপাক্ষ! বিপদই যদি ঘটতে পারে তবে ঘটাবার জন্যে অত ব্যস্ত হও কেন। কে তোমার কথাটা নিয়ে দিনরাত্রি সামলে বেড়ায়।

বিরূপাক্ষ। কথাটা উঠে পড়ল নাকি সেইজন্যেই— তা বেশ, নাই বললেম। আমি বাজে কথা বলবার লোকই নই। রাজা দেখা দেন না সে কথাটা তোমরাই তুললে— তাই তো আমি বললেম, সাধে দেখা দেন-না।

প্রথম। ওহে বিরূপাক্ষ, বলেই ফেলো-না।

বিরূপাক্ষ। তা, তোমাদের কাছে বলতে দোষ নেই, তোমরা হলে বন্ধু-মানুষ। (মৃদুস্বরে) রাজাকে দেখতে বড়ো বিকট, সেইজন্যে পণ করেছে কাউকে দেখা দেবে না।

প্রথম। তাই তো বটে। আমরা বলি, ভালো রে ভালো, সকল দেশেই রাজাকে দেখে দেশসুদ্ধ লোকের আত্মাপুরুষ বাঁশপাতার মতো হী হী করে কাঁপতে থাকে, আর আমাদেরই রাজাকে দেখা যায় না কেন। কিছু না হোক, একবার যদি চোখ পাকিয়ে বলে ‘বেটার শির লেও’ তা হলেও যে বুঝি রাজা বলে একটা-কিছু আছে। বিরূপাক্ষের কথাটা মনে নিচ্ছে হে।

তৃতীয়। কিচ্ছু মনে নিচ্ছে না। ওর সিকি পয়সাও বিশ্বাস করি নে।