প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
প্রথম। ওহে জনার্দন, তোমার ঐ একটা বড়ো দোষ।
জনার্দন। কী দোষ দেখলে।
প্রথম। নিজের দেশের তুমি বড়ো নিন্দে কর। খোলা রাস্তাটাই বুঝি ভালো হল? বলো তো ভাই কৌণ্ডিল্য, খোলা রাস্তাটাকে বলে কিনা ভালো।
কৌণ্ডিল্য। ভাই ভবদত্ত, বরাবরই তো দেখে আসছ জনার্দনের ঐ একরকম তেড়া বুদ্ধি। কোন্ দিন বিপদে পড়বেন— রাজার কানে যদি যায় তা হলে ম’লে ওঁকে শ্মশানে ফেলবার লোক খুঁজে পাবেন না।
ভবদত্ত। আমাদের তো ভাই এই খোলা রাস্তার দেশে এসে অবধি খেয়ে-শুয়ে সুখ নেই—দিনরাত গা-ঘিনঘিন করছে। কে আসছে কে যাচ্ছে তার কোনো ঠিক-ঠিকানাই নেই—রাম রাম!
কৌণ্ডিল্য। সেও তো ঐ জনার্দনের পরামর্শ শুনেই এসেছি। আমাদের গুষ্টিতে এমন কখনো হয় নি। আমার বাবাকে তো জান— কতবড়ো মহাত্মালোক ছিল— শাস্ত্রমতে ঠিক ঊনপঞ্চাশ হাত মেপে গণ্ডি কেটে তার মধ্যেই সমস্ত জীবনটা কাটিয়ে দিলে— একদিনের জন্যে তার বাইরে পা ফেলে নি। মৃত্যুর পর কথা উঠল, ঐ ঊনপঞ্চাশ হাতের মধ্যেই তো দাহ করতে হয়। সে এক বিষম মুশকিল। শেষকালে শাস্ত্রী বিধান দিলে যে, ঊনপঞ্চাশে যে দুটো অঙ্ক আছে তার বাইরে যাবার জো নেই, অতএব ঐ চার নয় ঊনপঞ্চাশকে উলটে নিয়ে নয়-চার চুরানব্বই করে দাও। তবেই তো তাকে বাড়ির বাইরে পোড়াতে পারি, নইলে ঘরেই দাহ করতে হত। বাবা, এত আঁটাআঁটি! এ কি যে-সে দেশ পেয়েছ!
ভবদত্ত। বটেই তো, মরতে গেলেও ভাবতে হবে, এ কি কম কথা!
কৌণ্ডিল্য। সেই দেশের মাটিতে শরীর, তবু জনার্দন বলে কিনা খোলা রাস্তাই ভালো!
ঠাকুরদা। ওরে, দক্ষিনে হাওয়ার সঙ্গে সমান পাল্লা দিতে হবে, হার মানলে চলবে না— আজ সব রাস্তাই গানে
ভাসিয়ে দিয়ে চলব।