শ্যামলী

     থামতে পারি নে, থামাতে পারি নে তার তাড়না।

                     বিত্ত বাড়ে, খ্যাতি বাড়ে,

              বুক ফুলিয়ে এগিয়ে চলে আত্মশ্লাঘা।

     শেষে ডাক্তার বললে, বিশ্রাম চাই নিতান্তই,

            দেহের কল অচল হয়ে এল বলে।

 

     গেলেম দূরদেশে নির্জনে

              সেখানে সমুদ্রের একটা খাড়ি এসে মিলেছে

                       পাহাড়তলির অরণ্যে।

     ভিড় জমেছে গাছে গাছে

            মাছ - ধরা পাখিদের পাড়ার।

     ক্ষীণ নদীটি ঝরে পড়েছে পাহাড় থেকে

            পাথরের ধাপে ধাপে।

                 নুড়ি ডিঙিয়ে বেঁকে চলা

                 তার ফটিক জলের কল্‌কলানি

ধরিয়ে রেখেছে একটি মূল সুর নির্জনতার।

                 নিত্য - স্নান - করা সেখানকার হাওয়া

     চলেছে মন্ত্র গুন্‌গুনিয়ে বনের থেকে বনে।

 

              দল বেঁধেছে নারকেল গাছ —

                               কেউ খাড়া, কেউ হেলে - পড়া,

              দিনরাত ওদের ঝালর - ঝোলা অস্থিরপনা।

     ফিরে ফিরে আছাড় খেয়ে ফেনিয়ে উঠছে জেদালো ঢেউ

                   মোটা মোটা কালো পাথরে ;

              ডাঙায় ছড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে

                ঝিনুক শামুক শ্যাওলা।

        ক্লান্ত শরীর ব্যস্ত মনকে ফিরিয়েছে

               শান্ত রক্তধারার স্নিগ্ধতায়।

                      কর্মের নেশার ঝাঁজ এল মরে।

         এতকালের খাটুনি মনে হল যেন ফাঁকি,

               প্রাণ উঠল দু হাত বাড়িয়ে

                    জীবনের সাঁচ্চা সোনার জন্যে।