নতুন পুতুল

দুজনের এই কথা-কাটাকাটি কতবার হয়েছে। বারে বারে একই কথা।

তার পরে বুড়ো তার ঝুলি থেকে মালমশলা বের করে; চোখে মস্ত গোল চশমাটা আঁটে।

নাতনিকে বলে, “কিন্তু দাদি, ভুট্টা যে কাকে খেয়ে যাবে।”

নাতনি বলে, “দাদা, আমি কাক তাড়াব।”

বেলা বয়ে যায়; দূরে ইঁদারা থেকে বলদে জল টানে, তার শব্দ আসে; নাতনি কাক তাড়ায়, বুড়ো বসে বসে পুতুল গড়ে।


বুড়োর সকলের চেয়ে ভয় তার মেয়েকে। সেই গিন্নির শাসন বড়ো কড়া, তার সংসারে সবাই থাকে সাবধানে।

বুড়ো আজ একমনে পুতুল গড়তে বসেছে; হুঁশ হল না, পিছন থেকে তার মেয়ে ঘন ঘন হাত দুলিয়ে আসছে।

কাছে এসে যখন সে ডাক দিলে তখন চশমাটা চোখ থেকে খুলে নিয়ে অবোধ ছেলের মতো তাকিয়ে রইল।

মেয়ে বললে, “দুধ দোওয়া পড়ে থাক্‌, আর তুমি সুভদ্রাকে নিয়ে বেলা বইয়ে দাও। অত বড়ো মেয়ে, ওর কি পুতুলখেলার বয়স।”

বুড়ো তাড়াতাড়ি বলে উঠল, “সুভদ্রা খেলবে কেন। এ পুতুল রাজবাড়িতে বেচব। আমার দাদির যেদিন বর আসবে সেদিন তো ওর গলায় মোহরের মালা পরাতে হবে। আমি তাই টাকা জমাতে চাই।”
মেয়ে বিরক্ত হয়ে বললে, “রাজবাড়িতে এ পুতুল কিনবে কে।”

বুড়োর মাথা হেঁট হয়ে গেল। চুপ করে বসে রইল।

সুভদ্রা মাথা নেড়ে বললে, “দাদার পুতুল রাজবাড়িতে কেমন না কেনে দেখব।”


দু দিন পরে সুভদ্রা এক কাহন সোনা এনে মাকে বললে, “এই নাও, আমার দাদার পুতুলের দাম।”

মা বললে, “কোথায় পেলি।”

মেয়ে বললে, “রাজপুরীতে গিয়ে বেচে এসেছি।”

বুড়ো হাসতে হাসতে বললে, “দাদি, তবু তো তোর দাদা এখন চোখে ভালো দেখে না, তার হাত কেঁপে যায়।”

মা খুশি হয়ে বললে, “এমন ষোলোটা মোহর হলেই তো সুভদ্রার গলার হার হবে।”

বুড়ো বললে, “তার আর ভাবনা কী।”

সুভদ্রা বুড়োর গলা জড়িয়ে ধরে বললে, “দাদাভাই, আমার বরের জন্যে তো ভাবনা নেই।”

বুড়ো হাসতে লাগল, আর চোখ থেকে এক ফোঁটা জল মুছে ফেললে।


বুড়োর যৌবন যেন ফিরে এল। সে গাছের তলায় বসে পুতুল গড়ে আর সুভদ্রা কাক তাড়ায়, আর দূরে ইঁদারায় বলদে ক্যাঁ-কোঁ