নাট্যশেষ

                ১

 

দূর অতীতের পানে পশ্চাতে ফিরিয়া চাহিলাম ;

হেরিতেছি যাত্রী দলে দলে। জানি সবাকার নাম,

চিনি সকলেরে। আজ বুঝিয়াছি, পশ্চিম - আলোতে

ছায়া ওরা। নটরূপে এসেছে নেপথ্যলোক হতে

দেহ - ছদ্মসাজে ; সংসারের ছায়ানাট্য অন্তহীন,

সেথায় আপন পাঠ আবৃত্তি করিয়া রাত্রিদিন

কাটাইল ; সূত্রধার অদৃষ্টের আভাসে আদেশে

চালাইল নিজ নিজ পালা, কভু কেঁদে, কভু হেসে

নানা ভঙ্গি নানা ভাবে। শেষে অভিনয় হলে সারা,

দেহবেশ ফেলে দিয়ে নেপথ্যে অদৃশ্যে হল হারা।

যে খেলা খেলিতে এল হয়তো কোথাও তার আছে

নাট্যগত অর্থ কোনোরূপ, বিশ্বমহাকবি - কাছে

প্রকাশিত। নটনটী রঙ্গসাজে ছিল যতক্ষণ

সত্য বলে জেনেছিল প্রত্যহের হাসি ও ক্রন্দন,

উত্থানপতন বেদনায়। অবশেষে যবনিকা

নেমে এল ; নিবে গেল একে একে প্রদীপের শিখা ;

ম্লান হল অঙ্গরাগ ; বিচিত্র চাঞ্চল্য গেল থেমে ;

যে নিস্তব্ধ অন্ধকারে রঙ্গমঞ্চ হতে গেল নেমে

স্তুতি নিন্দা সেথায় সমান, ভেদহীন মন্দ ভালো,

  দুঃখসুখভঙ্গি অর্থহীন, তুল্য অন্ধকার আলো,

লুপ্ত লজ্জাভয়ের ব্যঞ্জনা। যুদ্ধ উত্তারিয়া সীতা

পরক্ষণে প্রিয়হস্ত রচিতে বসিল তার চিতা ;

সে পালায় অবসানে নিঃশেষে হয়েছে নিরর্থক

সে দুঃসহ দুঃখদাহ—শুধু তারে কবির নাটক

কাব্যডোরে বাঁধিয়াছে, শুধু তারে ঘোষিতের গান,

শিল্পের কলায় শুধু রচে তাহা আনন্দের দান।