পুনশ্চ

           ওই শোনো , উষার প্রথম কোকিলের ডাক,

               অন্ধকারের মধ্যে তার আলোকের অনুভূতি।

আজ সূর্যোদয়মুহূর্তে তোমারও প্রকাশ হবে

               আমার দিনের মধ্যে, এই আশায় রইলাম। '

        রাজা বলল, ‘ তাই হোক, ভীরুতা যাক কেটে। '

               দেখা হল।

        ট'লে উঠল যুগলের সংসার।

           ‘ কী অন্যায় — কি নিষ্ঠুর বঞ্চনা'

বলতে বলতে কমলিকা ঘর থেকে ছুটে পালিয়ে গেল।

 

                      গেল বহুদূরে

বনের মধ্যে মৃগয়ার জন্যে যে নির্জন রাজগৃহ আছে সেইখানে।

               কুয়াশায় শুকতারার মতো লজ্জায় সে আচ্ছন্ন।

রাত্রি যখন দুই প্রহর তখন আধ - ঘুমে সে শুনতে পায়

               এক বীণাধ্বনির আর্তরাগিণী।

                   স্বপ্নে বহুদূরের আভাস আসে,

                       মনে হয় এই সুর চিরদিনের চেনা।

                   রাতের পরে রাত গেল।

অন্ধকারে তরুতলে যে মানুষ ছায়ার মতো নাচে

                   তাকে চোখে দেখে না, তাকে হৃদয়ে দেখা যায় —

যেমন দেখা যায় জনশূন্য দেওদার বনের দোলায়িত শাখায়

                       দক্ষিণসমুদ্রের হাওয়ার হাহাকার - মূর্তি।

 

                 এ কী হল রাজমহিষীর।

           কোন্‌ হতাশের বিরহ তার বিরহকে জাগিয়ে তোলে!

    মাটির প্রদীপ - শিখায় সোনার প্রদীপ জ্বলে উঠল বুঝি।

        রাতজাগা পাখি নিস্তব্ধ নীড়ের পাশ দিয়ে হূহু করে উড়ে যায়,

তার পাখার শব্দে ঘুমন্ত পাখির পাখা উৎসুক হয়ে ওঠে যে।

 

   বীণায় বাজতে থাকে কেদারা, বেহাগ, বাজে কালাংড়া।

আকাশে আকাশে তারাগুলি যেন তামসী তপস্বিনীর নীরব জপমন্ত্র।

           রাজমহিষী বিছানার ‘পরে উঠে বসে।