প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
নাগকেশরের বনে নিভৃতে সখাদের সঙ্গে আমার নৃত্যের দিন।
প্রাসাদশিখর থেকে চেয়ে দেখো। '
মহিষীর দীর্ঘনিশ্বাস পড়ল ;
বললে, ‘ চিনব কী করে। '
রাজা বললে, ‘ যেমন খুশি কল্পনা করে নিয়ো,
সেই কল্পনাই হবে সত্য। '
চৈত্রসংক্রান্তির রাত্রে আবার মিলন।
মহিষী বললে, ‘ দেখলাম নাচ। যেন মঞ্জরিত শালতরুশ্রেণীতে
বসন্তবাতাসের মত্ততা।
সকলেই সুন্দর,
যেন ওরা চন্দ্রলোকের শুক্লপক্ষের মানুষ।
কেবল একজন কুশ্রী কেন রসভঙ্গ করলে, ও যেন রাহুর অনুচর।
ওখানে কী গুণে সে পেল প্রবেশের অধিকার। '
রাজা স্তব্ধ হয়ে রইল।
কিছু পরে বললে, ‘ ওই কুশ্রীর পরম বেদনাতেই তো সুন্দরের আহ্বান ।
কালো মেঘের লজ্জাকে সান্ত্বনা দিতেই সূর্যরশ্মি তার ললাটে পরায় ইন্দ্রধনু,
মরুনীরস কালো মর্তের অভিশাপের উপর স্বর্গের করুণা যখন রূপ ধরে
তখনই তো শ্যামলসুন্দরের আবির্ভাব।
প্রিয়তমে, সেই করুণাই কি তোমার হৃদয়কে কাল মধুর করে নি। '
‘ না মহারাজ, না' ব'লে মহিষী দুই হাতে মুখ ঢাকলে।
রাজার কণ্ঠের সুরে অশ্রুর ছোঁওয়া লাগল ;
বললে, ‘ যাকে দয়া করলে হৃদয় তোমার ভরে উঠত
তাকে ঘৃণা ক'রে মনকে কেন পাথর করলে। '
‘ রসবিকৃতির পীড়া সইতে পারি নে'
এই ব'লে মহিষী আসন থেকে উঠে পড়ল।
রাজা তার হাত ধরলে ;
বললে, ‘ একদিন সইতে পারবে আপনারই আন্তরিক রসের দাক্ষিণ্যে —
কুশ্রীর আত্মত্যাগে সুন্দরের সার্থকতা। '
ভ্রূ কুটিল করে মহিষী বললে,
‘ অসুন্দরের জন্যে তোমার এই অনুকম্পার অর্থ বুঝি নে।