তপতী
এখনো পর নি। যাও, রাজার আদেশ, এখনই বেশ পরিবর্তন করোগে। এ তো রাজরানীর বেশ—

সুমিত্রা। তাই করব মহারাজ, তাই করব, বেশ পরিবর্তন করব। ধিক এই রাজ্য! ধিক আমি এ রাজ্যের রানী!

[দেবদত্ত ও বিক্রম ছাড়া আর সকলের প্রস্থান

দেবদত্ত। মহারাজ, আমিও যাচ্ছি। কিন্তু একটা অপ্রিয় কথা বলে যাব। নির্বিচারে যেদিন ঐ কাশ্মীরীদের হাতে ক্ষমতা দিলে সেদিন রাজ্যে বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল। কত লোকের প্রাণদণ্ড হল, কত লোকের নির্বাসন। কত অভিজাত বংশের সম্মানী লোক অন্য রাজ্যে আশ্রয় নিলে। এত বাধা পেয়েছিলে বলেই, আত্মাভিমানের তাড়নায় তোমার নির্বন্ধ এমন দুর্ধর্ষ হয়েছিল।

বিক্রম। দেবদত্ত, এই ইতিবৃত্ত আবৃত্ত করবার কী প্রয়োজন হয়েছে।

দেবদত্ত। মহারাজ, আমার আর কিছু সাধ্য নেই, আমি কেবল পারি বিপদ সামনে রেখে অপ্রিয় কথা তোমাকে শোনাতে। একদিন কেবলমাত্র অস্ত্রের যুক্তিতে প্রমাণ করতে চেয়েছিলে যে, এ রাজ্যে সকলেই ভুল করছে কেবল তুমি ছাড়া। বহু কণ্ঠ ছেদন করে রাজ্যের কণ্ঠরোধ করেছিলে। এতবড়ো প্রকাশ্য অহংকারের প্রমাদ সংশোধন পরিশেষে তোমার পক্ষে দুঃসাধ্য হবে এ আমি জানি। সুতরাং স্বয়ং বিধাতাকে নিতে হল সেই ভার।

বিক্রম। এ কথার সহজ অর্থ, তোমরা বিদ্রোহ করবে?

দেবদত্ত। তুমি জান সে আমার অসাধ্য— দেবতা হয়েছেন বিদ্রোহী, রাজ্যে দুর্যোগ এল, কঠিন দুঃখে এর অবসান।

বিক্রম। দেবতার নাম নিচ্ছ আমাকে ভয় দেখাতে?

দেবদত্ত। মহারাজ, তোমাকে ভয় দেখানো কি একটা খেলা। তোমার ভয় আমাদের পক্ষে সব চেয়ে ভয়ংকর। তোলো তোমার দণ্ড, প্রথম আঘাত পড়ুক আমাদের ’পরে যারা তোমার একান্ত আপনার। তোমার অন্যায়কে যারা নিজের লজ্জা করে নিয়েছে, তোমার ক্রোধকে দুঃখরূপে নিক তারা মাথায় করে। দাও দণ্ড আমাকে।

বিক্রম। যদি নাই দিই?

দেবদত্ত। অগ্রসর হয়ে নেব। আজ আমাদের জন্যে আরাম নেই, সম্মান নেই। যাও মহারাজ, তুমি উৎসব করো। আমাকে রুদ্রভৈরবের পূজা করতেই হবে। মন্দিরে প্রবেশ করতে নাই দিলে— তাঁর পূজার আহ্বান আজ শুনতে পাচ্ছি সর্বত্র এই রাজ্যের বাতাসে।

বিক্রম। স্পষ্ট কথার ছলে আমাকে অপমান করতে চাও, আমার কথাও একদিন অত্যন্ত স্পষ্ট হয়ে উঠবে— বিলম্ব নেই।

[ উভয়ের প্রস্থান
বিপাশার প্রবেশ

বিপাশা। শোনো শোনো, রাজকুমার, শোনো।

নরেশের প্রবেশ

নরেশ। কী বলো।

বিপাশা। এই মালা তোমার, বীরের কণ্ঠের যোগ্য।

নরেশ। পরিচয় পেয়েছ?

বিপাশা। পেয়েছি।