পুনশ্চ

আশ্রয় যেখানে আশ্রিতকে বিদ্রূপ করে।

রৌদ্রদগ্ধ বৈশাখের দীর্ঘ প্রহর কাটল পথে পথে।

সন্ধ্যাবেলায় আলোক যখন ম্লান তখন তারা কালজ্ঞকে শুধায়,

ওই কি দেখা যায় আমাদের চরম আশার তোরণচূড়া।

সে বলে, না, ও যে সন্ধ্যাভ্রশিখরে অস্তগামী সূর্যের বিলীয়মান আভা।

তরুণ বলে, থেমো না বন্ধু, অন্ধতমিস্র রাত্রির মধ্য দিয়ে

আমাদের পৌঁছতে হবে মৃত্যুহীন জ্যোতির্লোকে।

অন্ধকারে তারা চলে।

পথ যেন নিজের অর্থ নিজে জানে,

পায়ের তলার ধূলিও যেন নীরব স্পর্শে দিক চিনিয়ে দেয়।

স্বর্গপথযাত্রী নক্ষত্রের দল মূক সংগীতে বলে, সাথি, অগ্রসর হও।

অধিনেতার আকাশবাণী কানে আসে — আর বিলম্ব নেই।

প্রত্যুষের প্রথম আভা

অরণ্যের শিশিরবর্ষী পল্লবে পল্লবে ঝলমল করে উঠল।

নক্ষত্রসংকেতবিদ্‌ জ্যোতিষী বললে, বন্ধু, আমরা এসেছি।

পথের দুই ধারে দিক্‌প্রান্ত অবধি

পরিণত শস্যশীর্ষ স্নিগ্ধ বায়ুহিল্লোলে দোলায়মান —

আকাশের স্বর্ণলিপির উত্তরে ধরণীর আনন্দবাণী।

গিরিপদবর্তী গ্রাম থেকে নদীতলবর্তী গ্রাম পর্যন্ত

প্রতিদিনের লোকযাত্রা শান্ত গতিতে প্রবহমান —

কুমোরের চাকা ঘুরছে গুঞ্জনস্বরে,

কাঠুরিয়া হাটে আনছে কাঠের ভার,

রাখাল ধেনু নিয়ে চলেছে মাঠে,

বধূরা নদী থেকে ঘট ভ'রে যায় ছায়াপথ দিয়ে।

কিন্তু কোথায় রাজার দুর্গ, সোনার খনি,

মারণ-উচাটন-মন্ত্রের পুরাতন পুঁথি?

জ্যোতিষী বললে, নক্ষত্রের ইঙ্গিতে ভুল হতে পারে না,

তাদের সংকেত এইখানেই এসে থেমেছে।

এই বলে ভক্তিনম্রশিরে পথপ্রান্তে একটি উৎসের কাছে গিয়ে সে দাঁড়ালো।

সেই উৎস থেকে জলস্রোত উঠছে যেন তরল আলোক,