শিশুতীর্থ

রাত কত হল?

উত্তর মেলে না।

কেননা, অন্ধ কাল যুগ-যুগান্তরের গোলকধাঁধায় ঘোরে, পথ অজানা,

পথের শেষ কোথায় খেয়াল নেই।

পাহাড়তলিতে অন্ধকার মৃত রাক্ষসের চক্ষুকোটরের মতো;

স্তূপে স্তূপে মেঘ আকাশের বুক চেপে ধরেছে;

পুঞ্জ পুঞ্জ কালিমা গুহায় গর্তে সংলগ্ন,

মনে হয় নিশীথরাত্রের ছিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ;

দিগন্তে একটা আগ্নেয় উগ্রতা

ক্ষণে ক্ষণে জ্বলে আর নেভে —

ও কি কোনো অজানা দুষ্টগ্রহের চোখ-রাঙানি।

ও কি কোনো অনাদি ক্ষুধার লেলিহ লোল জিহ্বা।

বিক্ষিপ্ত বস্তুগুলো যেন বিকারের প্রলাপ,

অসম্পূর্ণ জীবলীলার ধূলিবিলীন উচ্ছিষ্ট;

তারা অমিতাচারী দৃপ্ত প্রতাপের ভগ্ন তোরণ,

লুপ্ত নদীর বিস্মৃতিবিলগ্ন জীর্ণ সেতু,

দেবতাহীন দেউলের সর্পবিবরছিদ্রিত বেদী,

অসমাপ্ত দীর্ণ সোপানপঙ্‌ক্তি শূন্যতায় অবসিত।

অকস্মাৎ উচ্চণ্ড কলরব আকাশে আবর্তিত আলোড়িত হতে থাকে —

ও কি বন্দী বন্যাবারির গুহাবিদারণের রলরোল।

ও কি ঘূর্ণ্যতাণ্ডবী উন্মাদ সাধকের রুদ্রমন্ত্র-উচ্চারণ।

ও কি দাবাগ্নিবেষ্টিত মহারণ্যের আত্মঘাতী প্রলয়নিনাদ।

এই ভীষণ কোলাহলের তলে তলে একটা অস্ফুট ধ্বনিধারা বিসর্পিত —

যেন অগ্নিগিরিনিঃসৃত গদগদকলমুখর পঙ্কস্রোত;

তাতে একত্রে মিলেছে পরশ্রীকাতরের কানাকানি, কুৎসিত জনশ্রুতি,

অবজ্ঞার কর্কশহাস্য।

সেখানে মানুষগুলো সব ইতিহাসের ছেঁড়া পাতার মতো

ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছে —

মশালের আলোয় ছায়ায় তাদের মুখে

বিভীষিকার উল্কি পরানো।