অচলা বুড়ি
অচলবুড়ি, মুখখানি তার হাসির রসে ভরা
স্নেহের রসে পরিপক্ক অতিমধুর জরা।
ফুলো ফুলো দুই চোখে তার, দুই গালে আর ঠোঁটে
উছলে-পড়া হৃদয় যেন ঢেউ খেলিয়ে ওঠে।
পরিপুষ্ট অঙ্গটি তার, হাতের গড়ন মোটা,
কপালে দুই ভুরুর মাঝে উল্‌কি-আঁকা ফোঁটা।
গাড়ি-চাপা কুকুর একটা মরতেছিল পথে,
সেবা ক ' রে বাঁচিয়ে তারে তুলল কোনোমতে।
খোঁড়া কুকুর সেই ছিল তার নিত্যসহচর ;
আধপাগলি ঝি ছিল এক, বাড়ি বালেশ্বর।
দাদাঠাকুর বলত, “ বুড়ি, জমল কত টাকা,
সঙ্গে ওটা যাবে না তো, বাক্সে রইল ঢাকা,
ব্রাহ্মণে দান করতে না চাও নাহয় দাও-না-ধার,
জানোই তো এই অসময়ে টাকার কী দরকার। ”
বুড়ি হেসে বলে, “ ঠাকুর, দরকার তো আছেই,
সেইজন্যে ধার না দিয়ে রাখি টাকা কাছেই। ”
 
সাঁৎরাপাড়ার কায়েতবাড়ির বিধবা এক মেয়ে,
এককালে সে সুখে ছিল বাপের আদর পেয়ে।
বাপ মরেছে, স্বামী গেছে, ভাইরা না দেয় ঠাঁই —
দিন চালাবে এমনতরো উপায় কিছু নাই।
শেষকালে সে ক্ষুধার দায়ে, দৈন্যদশার লাজে
চলে গেল হাঁসপাতালে রোগীসেবার কাজে।
এর পিছনে বুড়ি ছিল, আর ছিল লোক তার
কংসারি শীল বেনের ছেলে মুকুন্দ মোক্তার।
গ্রামের লোকে ছি-ছি করে, জাতে ঠেলল তাকে,
একলা কেবল অচল বুড়ি আদর করে ডাকে।
সে বলে, “ তুই বেশ করেছিস যা বলুক-না যেবা,
ভিক্ষা মাগার চেয়ে ভালো দুঃখী দেহের সেবা। ”