পুনশ্চ

    আমার অধিকারে সীমা দিতে চাও

                   এতবড়ো স্পর্ধা!'

রামানন্দ বললেন, ‘প্রভাতেই যাব এই সীমা ছেড়ে,

        দেব আমার অহংকার দূর করে তোমার বিশ্বলোকে। '

        তখন রাত্রি তিন - প্রহর,

    আকাশের তারাগুলি যেন ধ্যানমগ্ন।

        গুরুর নিদ্রা গেল ভেঙে; শুনতে পেলেন,

           ‘সময় হয়েছে, ওঠো, প্রতিজ্ঞা পালন করো। '

রামানন্দ হাতজোড় করে বললেন, ‘এখনো রাত্রি গভীর,

    পথ অন্ধকার, পাখিরা নীরব।

        প্রভাতের অপেক্ষায় আছি। '

ঠাকুর বললেন, ‘প্রভাত কি রাত্রির অবসানে।

    যখনি চিত্ত জেগেছে, শুনেছ বাণী,

        তখনি এসেছে প্রভাত।

           যাও তোমার ব্রতপালনে। '

 

রামানন্দ বাহির হলেন পথে একাকী,

    মাথার উপরে জাগে ধ্রুবতারা।

পার হয়ে গেলেন নগর, পার হয়ে গেলেন গ্রাম।

    নদীতীরে শ্মশান, চণ্ডাল শবদাহে ব্যাপৃত।

        রামানন্দ দুই হাত বাড়িয়ে তাকে নিলেন বক্ষে।

সে ভীত হয়ে বললে, ‘প্রভু, আমি চণ্ডাল, নাভা আমার নাম,

               হেয় আমার বৃত্তি,

        অপরাধী করবেন না আমাকে। '

গুরু বললেন, ‘অন্তরে আমি মৃত, অচেতন আমি,

    তাই তোমাকে দেখতে পাই নি এতকাল,

        তাই তোমাকেই আমার প্রয়োজন —

           নইলে হবে না মৃতের সৎকার। '

 

চললেন গুরু আগিয়ে।

        ভোরের পাখি উঠল ডেকে,

    অরুণ - আলোয় শুকতারা গেল মিলিয়ে।