স্মৃতি

পশ্চিমে শহর।

         তারি দূর কিনারায় নির্জনে

      দিনের তাপ আগলে আছে একটা অনাদৃত বাড়ি,

         চারি দিকে চাল পড়েছে ঝুঁকে।

ঘরগুলোর মধ্যে চিরকালের ছায়া উপুড় হয়ে পড়ে,

      আর চিরবন্দী পুরাতনের একটা গন্ধ।

             মেঝের উপর হলদে জাজিম,

      ধারে ধারে ছাপ-দেওয়া বন্দুক-ধারী বাঘ-মারা শিকারীর মূর্তি।

         উত্তর দিকে সিসুগাছের তলা দিয়ে

             চলেছে সাদা মাটির রাস্তা, উড়ছে ধুলো

                  খররৌদ্রের গায়ে হালকা উড়নির মতো।

সামনের চরে গম অড়র ফুটি তরমুজের খেত,

         দূরে ঝক্‌মক্‌ করছে গঙ্গা,

             তার মাঝে মাঝে গুণ-টানা নৌকো

                     কালির আঁচড়ে আঁকা ছবি যেন।

বারান্দায় রুপোর-কাঁকন-পরা ভজিয়া

             গম ভাঙছে জাঁতায়,

                 গান গাইছে একঘেয়ে সুরে,

গির্‌ধারী দারোয়ান অনেক ক্ষণ ধরে তার পাশে বসে আছে

                     জানি না কিসের ওজরে।

বুড়ো নিমগাছের তলায় ইঁদারা,

         গোরু দিয়ে জল টেনে তোলে মালী,

             তার কাকুধ্বনিতে মধ্যাহ্ন সকরুণ,

          তার জলধারায় চঞ্চল ভুট্টার খেত।

      গরম হাওয়ায় ঝাপসা গন্ধ আসছে আমের বোলের,

খবর আসছে মহানিমের মঞ্জরীতে মৌমাছির বসেছে মেলা।

    

          অপরাহ্নে শহর থেকে আসে একটি পরবাসী মেয়ে,

         তাপে কৃশ পাণ্ডুবর্ণ বিষণ্ন তার মুখ,

                  মৃদুস্বরে পড়িয়ে যায় বিদেশী কবির কবিতা।