বৈতরণী
                         ওগো বৈতরণী,
         তরল খড়্গের মতো ধারা তব, নাই তার ধ্বনি,
                       নাই তার তরঙ্গভঙ্গিমা;
         নাই রূপ, নাই স্পর্শ, ছন্দে তার নাই কোনো সীমা;
                       অমাবস্যা রজনীর
                            সুপ্তি সুগম্ভীর
                      মৌনী প্রহরের মতো
         নিরাকার পদচারে শূন্যে শূন্যে ধায় অবিরত।
                      প্রাণের অরণ্যতট হতে
         দণ্ড পল খসে খসে পড়ে তব অন্ধকারস্রোতে।
         রূপের না থাকে চিহ্ন, নাহি থাকে বর্ণের বর্ণনা,
                       বাণীর না থাকে এক কণা।

 

                        ওগো বৈতরণী,
                      কতবার খেয়ার তরণী
         এসেছিল এই ঘাটে আমার এ বিশ্বের আলোতে।
              নিয়ে গেল কালহীন তোমার কালোতে
                       কত মোর উৎসবের বাতি,
         আমার প্রাণের আশা, আমার গানের কত সাথি,
         দিবসেরে রিক্ত করি, তিক্ত করি, আমার রাত্রিরে।
         সেই হতে চিত্ত মোর নিয়েছে আশ্রয় তব তীরে।

 

                        ওগো বৈতরণী,
         অদৃশ্যের উপকূলে থেমে গেছে যেথায় ধরণী
                        সেথায় নির্জনে
                      দেখি আমি আপনার মনে
         তোমার অরূপতলে সব রূপ পূর্ণ হয়ে ফুটে,
                           সব গান দীপ্ত হয়ে উঠে
                              শ্রবণের পরপারে
                           তব নিঃশব্দের কণ্ঠহারে।