পান্থ

শুধায়ো না মোরে তুমি মুক্তি কোথা, মুক্তি কারে কই,

       আমি তো সাধক নই, আমি গুরু নই।

       আমি কবি, আছি

       ধরণীর অতি কাছাকাছি,

                এ পারের খেয়ার ঘাটায়।

       সম্মুখে প্রাণের নদী জোয়ার-ভাঁটায়

                নিত্য বহে নিয়ে ছায়া আলো,

                        মন্দ ভালো,

ভেসে-যাওয়া কত কী যে, ভুলে-যাওয়া কত রাশি রাশি

               লাভক্ষতি কান্নাহাসি —

এক তীর গড়ি তোলে অন্য তীর ভাঙিয়া ভাঙিয়া ;

সেই প্রবাহের ‘ পরে উষা ওঠে রাঙিয়া রাঙিয়া,

পড়ে চন্দ্রালোকরেখা জননীর অঙ্গুলির মতো ;

                কৃষ্ণরাতে তারা যত

জপ করে ধ্যানমন্ত্র ; অস্তসূর্য রক্তিম উত্তরী

বুলাইয়া চলে যায়, সে তরঙ্গে মাধবীমঞ্জরি

                 ভাসায় মাধুরীডালি,

                পাখি তার গান দেয় ঢালি।

    সে তরঙ্গনৃত্যছন্দে বিচিত্র ভঙ্গিতে

    চিত্ত যবে নৃত্য করে আপন সংগীতে

                এ বিশ্বপ্রবাহে,

     সে ছন্দে বন্ধন মোর, মুক্তি মোর তাহে।

রাখিতে চাহি না কিছু, আঁকড়িয়া চাহি না রহিতে,

         ভাসিয়া চলিতে চাই সবার সহিতে

         বিরহমিলনগ্রন্থি খুলিয়া খুলিয়া,

             তরণীর পালখানি পলাতকা বাতাসে তুলিয়া।

 

                  হে মহাপথিক,

                  অবারিত তব দশ দিক।

  তোমার মন্দির নাই, নাই স্বর্গধাম,