চণ্ডালিকা

        জন্ম নিয়েছি ধূলিতে,

        দয়া করে দাও ভুলিতে,

            নাই ধূলি মোর অন্তরে।

        নয়ন তোমার নত করো,

        দলগুলি কাঁপে থরো থরো।

            চরণপরশ দিয়ো দিয়ো,

            ধূলির ধনকে করো স্বর্গীয়,

                ধরার প্রণাম আমি

                  তোমার তরে॥

মা। বাছা, কিছু কিছু বুঝতে পারি তোর কথা। তুই মেয়েমানুষ, সেবাতেই তোর পুজো, সেবাতেই তোর রাজত্ব। এক নিমিষে জাত ডিঙিয়ে যেতে পারে মেয়েরাই; ধরা পড়ে, সবাই তারা রাজরানীর অংশ, যদি হঠাৎ স’রে পড়ে ভাগ্যের পর্দাটা। সুযোগ তোর তো ঘটেছিল। মৃগয়ায় বেরিয়ে রাজার ছেলে এসেছিল তোরই এই কুয়োতলায়। মনে পড়ে তো?

প্রকৃতি। হাঁ, মনে পড়ে।

মা। কেন গেলি নে রাজার ঘরে। রূপ দেখে সে তো ভুলেছিল।

প্রকৃতি। ভুলেছিল না তো কী। ভুলেই ছিল যে, আমি মানুষ। পশু মারতে বেরিয়েছিল; চোখে ঠেকে পশুকেই, তাকেই চায় বাঁধতে সোনার শিকলে।

মা। তবু তো শিকার বলেও ঐ মুখ লক্ষ্য করেছিল সে। আর, ভিক্ষু, সে কি নারী বলে চিনেছে তোমাকে।

প্রকৃতি। বুঝবে না তুমি বুঝবে না। আমি বুঝেছি, এতদিন পরে সেই আমাকে প্রথম চিনেছে। সে বড়ো আশ্চর্য।

গান

        ওগো, তোমার চক্ষু দিয়ে মেলে সত্যদৃষ্টি

            আমার সত্যরূপ    প্রথম করেছ সৃষ্টি।

        তোমায় প্রণাম, তোমায় প্রণাম,

            তোমায়    প্রণাম শতবার।

আমি    তরুণ অরুণলেখা,

আমি     বিমল জ্যোতির রেখা,

আমি    নবীন শ্যামল মেঘে

            প্রথম প্রসাদবৃষ্টি।

  তোমায় প্রণাম, তোমায় প্রণাম,

            তোমায়   প্রণাম শতবার।

তাঁকে চাই, মা। নিতান্তই চাই। তাঁর সামনে সাজিয়ে ধরতে চাই আমার এ জন্মের পূজার ডালি। অশুচি হবে না তাতে তাঁর চরণ। দেখুক সবাই আমার স্পর্ধা। গৌরব ক’রে বলতে চাই, আমি তোমার সেবিকা, নইলে সংসারে সবারই পায়ের কাছে চিরদিন