সোনার তরী
                   সর্বশক্তি মরণের মুখের সম্মুখে
                   দাঁড়াইয়া সুকুমার ক্ষীণ তনুলতা
                   বলে, ‘ মৃত্যু তুমি নাই। — হেন গর্বকথা!
                   মৃত্যু হাসে বসি। মরণপীড়িত সেই
                   চিরজীবী প্রেম আচ্ছন্ন করেছে এই
                   অনন্ত সংসার, বিষণ্ন নয়ন- ' পরে
                   অশ্রুবাষ্প-সম, ব্যাকুল আশঙ্কাভরে
                   চির-কম্পমান। আশাহীন শ্রান্ত আশা
                   টানিয়া রেখেছে এক বিষাদ-কুয়াশা
                   বিশ্বময়। আজি যেন পড়িছে নয়নে —
                   দুখানি অবোধ বাহু বিফল বাঁধনে
                   জড়ায়ে পড়িয়া আছে নিখিলেরে ঘিরে,
                   স্তব্ধ সকাতর। চঞ্চল স্রোতের নীরে
                   পড়ে আছে একখানি অচঞ্চল ছায়া —
                   অশ্রুবৃষ্টিভরা কোন্‌ মেঘের সে মায়া।
                   তাই আজি শুনিতেছি তরুরক মর্মরে
                   এত ব্যাকুলতা ; অলস ঔদাস্যভরে
                   মধ্যাহ্নের তপ্ত বায়ু মিছে খেলা করে
                   শুষ্ক পত্র লয়ে ; বেলা ধীরে যায় চলে
                   ছায়া দীর্ঘতর করি অশত্থের তলে।
                   মেঠো সুরে কাঁদে যেন অনন্তের বাঁশি
                   বিশ্বের প্রান্তর-মাঝে ; শুনিয়া উদাসী
                   বসুন্ধরা বসিয়া আছেন এলোচুলে
                   দূরব্যাপী শস্যক্ষেত্রে জাহ্নবীর কূলে
                   একখানি রৌদ্রপীত হিরণ্য-অঞ্চল
                   বক্ষে টানি দিয়া ; স্থির নয়নযুগল
                   দূর নীলাম্বরে মগ্ন ; মুখে নাহি বাণী।
                   দেখিলাম তাঁর সেই ম্লান মুখখানি
                   সেই দ্বারপ্রান্তে লীন, স্তব্ধ মর্মাহত
                   মোর চারি বৎসরের কন্যাটির মতো।