সোনার তরী

    যদি তার মুখে ফুটে পূর্ণ প্রেমজ্যোতি —

    তোমার কি তাঁর, বন্ধু, তাহে কার ক্ষতি?

 

 

    সত্য করে কহো মোরে হে বৈষ্ণব কবি ,

    কোথা তুমি পেয়েছিলে এই প্রেমচ্ছবি,

    কোথা তুমি শিখেছিলে এই প্রেমগান

    বিরহ-তাপিত। হেরি কাহার নয়ান,

    রাধিকার অশ্রু-আঁখি পড়েছিল মনে?

    বিজন বসন্তরাতে মিলনশয়নে

    কে তোমারে বেঁধেছিল দুটি বাহুডোরে,

    আপনার হৃদয়ের অগাধ সাগরে

    রেখেছিল মগ্ন করি! এত প্রেমকথা —

    রাধিকার চিত্তদীর্ণ তীব্র ব্যাকুলতা

    চুরি করি লইয়াছ কার মুখ, কার

    আঁখি হতে! আজ তার নাহি অধিকার

    সে সংগীতে! তারি নারীহৃদয়-সঞ্চিত

    তার ভাষা হতে তারে করিবে বঞ্চিত

    চিরদিন!

 

                 আমাদেরি কুটিরকাননে

    ফুটে পুষ্প, কেহ দেয় দেবতা-চরণে ,

    কেহ রাখে প্রিয়জন-তরে — তাহে তাঁর

    নাহি অসন্তোষ। এই প্রেমগীতি হার

    গাঁথা হয় নরনারী-মিলনমেলায়,

    কেহ দেয় তাঁরে, কেহ বঁধুর গলায় ।

    দেবতারে যাহা দিতে পারি, দিই তাই

    প্রিয়জনে — প্রিয়জনে যাহা দিতে পাই,

    তাই দিই দেবতারে ; আর পাব কোথা!

    দেবতারে প্রিয় করি, প্রিয়েরে দেবতা।

 

    বৈষ্ণবকবির গাঁথা প্রেম-উপহার