আর্তস্বর
শ্রাবণে গভীর নিশি               দিগ‍্‌বিদিক আছে মিশি
           মেঘেতে মেঘেতে ঘন বাঁধা,
কোথা শশী কোথা তারা            মেঘারণ্যে পথহারা।
             আঁধারে আঁধারে সব আঁধা।
জ্বলন্ত বিদ্যুৎ-অহি                    ক্ষণে ক্ষণে রহি রহি
             অন্ধকারে করিছে দংশন।
কুম্ভকর্ণ অন্ধকার                    নিদ্রা টুটি বার বার
             উঠিতেছে করিয়া গর্জন।
শূন্যে যেন স্থান নাই,                  পরিপূর্ণ সব ঠাঁই,
             সুকঠিন আঁধার চাপিয়া।
ঝড় বহে, মনে হয়               ও যেন রে ঝড় নয়,
           অন্ধকার দুলিছে কাঁপিয়া।
মাঝে মাঝে থর হ র               কোথা হতে মরমর
           কেঁদে কেঁদে উঠিছে অরণ্য।
নিশীথসমুদ্র-মাঝে                  জলজন্তু-সম রাজে
           নিশাচর যেন রে অগণ্য।
কে যেন রে মুহুর্মুহু         নিশ্বাস ফেলিছে হু হু,
           হু হু করে কেঁদে কেঁদে ওঠে,
সূদূর অরণ্যতলে             ডালপালা পায়ে দলে
           আর্তনাদ করে যেন ছোটে।
এ অনন্ত অন্ধকারে      কে রে সে, খুঁজিছে কারে,
           তন্ন তন্ন আকাশগহ্বর।
তারে নাহি দেখে কেহ,              শুধু শিহরায় দেহ
           শুনি তার তীব্র কণ্ঠস্বর।
তুই কি রে নিশীথিনী              অন্ধকারে অনাথিনী
           হারাইলি জগতেরে তোর?
অনন্ত আকাশ- ' পরি          ছুটিস রে হা হা করি,
           আলোড়িয়া অন্ধকার ঘোর।
তাই কি রে থেকে থেকে       নাম ধরে ডেকে ডেকে
           জগতেরে করিস আহ্বান।