ছায়ালোক

যেথায় তুমি গুণী জ্ঞানী, যেথায় তুমি মানী,

       যেথায় তুমি তত্ত্ববিদের সেরা,

আমি সেথায় লুকিয়ে যেতে পথ পাব না জানি,

       সেথায় তুমি লোকের ভিড়ে ঘেরা।

সেথায় তোমার বুদ্ধি সদাই জাগে,

চক্ষে তোমার আবেশ নাহি লাগে,

আমার ভীরু হৃদয় ছায়া মাগে,

       তোমার সেথায় আলোক খরতর,

যখন সেথা চাহ আমার বাগে

       সংকোচে প্রাণ কাঁপে থর থর।

মোহভাঙা দৃষ্টি তোমার যখন আঘাত হানে,

       যায় নিখিলের রহস্যদ্বার টুটে,

এক নিমেষে অপরূপের রূপের মধ্যখানে

       অন্ত্র যন্ত্র প্রকাশ পেয়ে উঠে।

বসুন্ধরার শ্যামল প্রাণের ঢাকা

রূঢ় পাথর গোপন ক ' রে রাখা,

ভিতরে তার কতই আঁকাবাঁকা

       কতকালের দাহন-ইতিহাসে,

ফাটলধরা কত-যে দাগ আঁকা

       তোমার চোখে বাহির হয়ে আসে।

তেমনি করে যখন কভু আমার পানে চাবে

     মর্মভেদী কৌতূহলের আঁখি,

বিধাতা যা লুকান লাজে দেখতে-যে তাই পাবে

     মোর রচনায় যা আছে তাঁর বাকি।

   আমার মাঝে তোমার অগোচরে

   আদিম যুগের গোপন গভীর স্তরে

   অপূর্ণতা রয়েছে অন্তরে,

     সৃষ্টি আমার অসমাপ্ত আছে,

সামনে এলে মরি-যে সেই ডরে

     ভাঙাচোরা চক্ষে পড়ে পাছে।