মহুয়া

          কহিনু আমি, ‘ রেখো না ভয় মনে,

তনু দেহটি সাজাব তব আমার আভরণে। '

          চাহিলে হাসিমুখে,

আধোচাঁদের কনকমালা দোলানু তব বুকে।

মকরচূড় মুকুটখানি কবরী তব ঘিরে

          পরায়ে দিনু শিরে।

          জ্বালায়ে বাতি মাতিল সখীদল,

তোমার দেহে রতনসাজ করিল ঝলমল।

মধুর হল বিধুর হল মাধবী নিশীথিনী,

আমার তালে তোমার নাচে মিলিল রিনিঝিনি।

          পূর্ণচাঁদ হাসে আকাশ-কোলে,

আলোকছায়া শিবশিবানী সাগরজলে দোলে।

 

          ফুরালো দিন কখন নাহি জানি,

সন্ধ্যাবেলা ভাসিল জলে আবার তরীখানি।

          সহসা বায়ু বহিল প্রতিকূলে,

প্রলয় এল সাগরতলে দারুণ ঢেউ তুলে।

         লবণজলে ভরি

আঁধার রাতে ডুবালো মোর রতনভরা তরী।

আবার ভাঙা ভাগ্য নিয়ে দাঁড়ানু দ্বারে এসে

          ভূষণহীন মলিন দীন বেশে।

দেখিনু আমি নটরাজের দেউলদ্বার খুলি

তেমনি করে রয়েছে ভরে ডালিতে ফুলগুলি।

     হেরিনু রাতে, উতল উৎসবে

          তরল কলরবে

আলোর নাচ নাচায় চাঁদ সাগরজলে যবে,

     নীরব তব নম্র নত মুখে

আমারি আঁকা পত্রলেখা, আমারি মালা বুকে।

     দেখিনু চুপে চুপে

আমারি বাঁধা মৃদঙ্গের ছন্দ রূপে রূপে

     অঙ্গে তব হিল্লোলিয়া দোলে

     ললিতগীতকলিত কল্লোলে।