মানসী
     কত কোটি কুহুতান             মিশায়েছে নিজ প্রাণ
                জীবের জীবন-ইতিহাসে।
     সুখে দুঃখে উৎসবে                  গান উঠে কলরবে
                বিরল গ্রামের মাঝখানে,
     তারি সাথে সুধাস্বরে            মিশে ভালোবাসাভরে
                পাখি-গানে মানবের গানে।
     কোজাগর পূর্ণিমায়              শিশু শূন্যে হেসে চায়,
                ঘিরে হাসে জনকজননী—
     সুদূর বনান্ত হতে                   দক্ষিণসমীরস্রোতে
                ভেসে আসে কুহুকুহু ধ্বনি।
     প্রচ্ছায় তমসাতীরে                 শিশু কুশলব ফিরে,
                সীতা হেরে বিষাদে হরিষে—
     ঘন সহকারশাখে             মাঝে মাঝে পিক ডাকে,
                কুহুতানে করুণা বরিষে।
লতাকুঞ্জে তপোবনে                  বিজনে দুষ্মন্তসনে
                 শকুন্তলা লাজে থরথর,
     তখনো সে কুহুভাষা                রমণীর ভালোবাসা
                 করেছিল সুমধুরতর।
     নিস্তব্ধ মধ্যাহ্নে তাই                  অতীতের মাঝে ধাই
                 শুনিয়া আকুল কুহুরব—
     বিশাল মানবপ্রাণ                   মোর মাঝে বর্তমান
                 দেশ কাল করি অভিভব।
     অতীতের দুঃখসুখ,                 দূরবাসী প্রিয়মুখ,
                 শৈশবের স্বপ্নশ্রুত গান,
     ওই কুহুমন্ত্রবলে                   জাগিতেছে দলে দলে,
                 লভিতেছে নূতন পরান।