মানসী
       বৃহৎ বিষাদছায়া,বিরহ গভীর,
       প্রচ্ছন্ন হৃদয়রুদ্ধ আকাঙ্ক্ষা অধীর,
       বর্ণন-অতীত যত অস্ফুট বচন—
       নির্জন ফেলিত ছেয়ে মেঘের মতন।

 

       যথা দিবা-অবসানে নিশীথনিলয়ে
       বিশ্ব দেখা দেয় তার গ্রহতারা লয়ে,
       হাস্যপরিহাসমুক্ত হৃদয়ে আমার
       দেখিত সে অন্তহীন জগৎবিস্তার।

 

       নিম্নে শুধু কোলাহল খেলাধুলা হাস,
       উপরে নির্লিপ্ত শান্ত অন্তর-আকাশ।
       আলোকেতে দেখো শুধু ক্ষণিকের খেলা,
       অন্ধকারে আছি আমি অসীম একেলা।

 

       কতটুকু ক্ষুদ্র মোরে দেখে গেছে চলে,
       কত ক্ষুদ্র সে বিদায় তুচ্ছ কথা ব’লে!
       কল্পনার সত্যরাজ্য দেখাই নি তারে,
       বসাই নি এ নির্জন আত্মার আঁধারে।

 

       এ নিভৃতে, এ নিস্তব্ধে, এ মহত্ত্ব-মাঝে
       দুটি চিত্ত চিরনিশি যদি রে বিরাজে—
       হাসিহীন শব্দশূন্য ব্যোম দিশাহারা,
       প্রেমপূর্ণ চারি চক্ষু জাগে চারি তারা।

 

       শ্রান্তি নাই, তৃপ্তি নাই, বাধা নাই পথে,
       জীবন ব্যাপিয়া যায় জগতে জগতে—
       দুটি প্রাণতন্ত্রী হতে পূর্ণ একতানে
       উঠে গান অসীমের সিংহাসন-পানে।