প্রভাতসংগীত
           জগৎ হইল শান্তিহীন।
           চারি দিক হতে উঠিতেছে
           আকুল বিশ্বের কণ্ঠস্বর,
           “জাগো জাগো জাগো মহাদেব,
           কবে মোরা পাব অবসর?
           অলঙ্ঘ্য নিয়মপথে ভ্রমি
           হয়েছে হে শ্রান্ত কলেবর।
           নিয়মের পাঠ সমাপিয়া
           সাধ গেছে খেলা করিবারে,
           একবার ছেড়ে দাও, দেব,
           অনন্ত এ আকাশ-মাঝারে।”
           জগতের আত্মা কহে কাঁদি,
           “আমারে নূতন দেহ দাও—
           প্রতিদিন বাড়িছে হৃদয়,
           প্রতিদিন বাড়িতেছে আশা,
           প্রতিদিন টুটিতেছে দেহ,
           প্রতিদিন ভাঙিতেছে বল।
           গাও দেব মরণসংগীত
           পাব মোরা নূতন জীবন।”
           জগৎ কাঁদিল উচ্চরবে
           জাগিয়া উঠিল মহেশ্বর,
           তিন কাল ত্রিনয়ন মেলি,
           হেরিলেন দিক দিগন্তর।
প্রলয়বিষাণ তুলি      করে ধরিলেন শূলী,
           পদতলে জগৎ চাপিয়া—
জগতের আদি অন্ত     থরথর থরথর
           একবার উঠিল কাঁপিয়া।
           বিষাণেতে পুরিলা নিশ্বাস,
           ছিঁড়িয়া পড়িয়া গেল
           জগতের সমস্ত বাঁধন।
উঠিল রে মহাশূন্যে গরজিয়া তরঙ্গিয়া
ছন্দোমুক্ত জগতের উন্মত্ত আনন্দকোলাহল।