সৃষ্টি স্থিতি প্রলয়
দেশশূন্য কালশূন্য জ্যোতিঃশূন্য, মহাশূন্য-’পরি
           চতুর্মুখ করিছেন ধ্যান,
মহা অন্ধ অন্ধকার সভয়ে রয়েছে দাঁড়াইয়া--
           কবে দেব খুলিবে নয়ান।
অনন্ত হৃদয়-মাঝে আসন্ন জগৎ-চরাচর
           দাঁড়াইয়া স্তম্ভিত নিশ্চল,
অনন্ত হৃদয়ে তাঁর ভূত ভবিষ্যৎ বর্তমান
           ধীরে ধীরে বিকাশিছে দল।
লেগেছে  ভাবের ঘোর,  মহানন্দে পূর্ণ তাঁর প্রাণ
           নিজের হৃদয়পানে চাহি,
নিস্তরঙ্গ রহিয়াছে অনন্ত আনন্দপারাবার--
           কূল নাহি, দিগ্‌বিদিক নাহি।
           পুলকে পূর্ণিত তাঁর প্রাণ,
সহসা আনন্দসিন্ধু হৃদয়ে উঠিল উথলিয়া,
           আদিদেব খুলিলা নয়ান;
জনশূন্য জ্যোতিঃশূন্য অন্ধতম অন্ধকার-মাঝে
           উচ্ছ্বসি উঠিল বেদগান।
           চারি মুখে বাহিরিল বাণী
           চারি দিকে করিল প্রয়াণ।
           সীমাহারা মহা অন্ধকারে
           সীমাশূন্য ব্যোমপারাবারে
           প্রাণপূর্ণ ঝটিকার মতো,
           ভাবপূর্ণ, ব্যাকুলতা-সম,
           আশাপূর্ণ অতৃপ্তির প্রায়,
           সঞ্চরিতে লাগিল সে ভাষা।
           দূর দূর যত দূর যায়
           কিছুতেই অন্ত নাহি পায়--
           যুগ যুগ যুগ  যুগান্তর
           ভ্রমিতেছে আজিও সে বাণী,
           আজিও সে অন্ত নাহি পায়।