চিত্রা

তুমি কারে কর না প্রার্থনা, কারো তরে

নাহি শোক। ধরাতলে দীনতম ঘরে

যদি জন্মে প্রেয়সী আমার, নদীতীরে

কোনো-এক গ্রামপ্রান্তে প্রচ্ছন্ন কুটিরে

অশ্বত্থছায়ায়, সে বালিকা বক্ষে তার

রাখিবে সঞ্চয় করি সুধার ভাণ্ডার

আমারি লাগিয়া সযতনে। শিশুকালে

নদীকূলে শিবমূর্তি গড়িয়া সকালে

আমারে মাগিয়া লবে বর। সন্ধ্যা হলে

জ্বলন্ত প্রদীপখানি ভাসাইয়া জলে

শঙ্কিত কম্পিত বক্ষে চাহি একমনা

করিবে সে আপনার সৌভাগ্যগণনা

একাকী দাঁড়ায়ে ঘাটে। একদা সুক্ষণে

আসিবে আমার ঘরে সন্নত নয়নে

চন্দনচর্চিত ভালে রক্তপট্টাম্বরে,

উৎসবের বাঁশরীসংগীতে। তার পরে

সুদিনে দুর্দিনে, কল্যাণকঙ্কণ করে,

সীমন্তসীমায় মঙ্গলসিন্দূরবিন্দু,

গৃহলক্ষ্মী দুঃখে সুখে, পূর্ণিমার ইন্দু

সংসারের সমুদ্রশিয়রে। দেবগণ,

মাঝে মাঝে এই স্বর্গ হইবে স্মরণ

দূরস্বপ্নসম, যবে কোনো অর্ধরাতে

সহসা হেরিব জাগি নির্মল শয্যাতে

পড়েছে চন্দ্রের আলো, নিদ্রিতা প্রেয়সী

লুণ্ঠিত শিথিল বাহু, পড়িয়াছে খসি

গ্রন্থি শরমের — মৃদু সোহাগচুম্বনে

সচকিতে জাগি উঠি গাঢ় আলিঙ্গনে

লতাইবে বক্ষে মোর — দক্ষিণ অনিল

আনিবে ফুলের গন্ধ, জাগ্রত কোকিল

গাহিবে সুদূর শাখে।