চিত্রা

তালভঙ্গ হত। হেলি উর্বশীর স্তনে

স্বর্ণবীণা থেকে থেকে যেন অন্যমনে

অকস্মাৎ ঝংকারিত কঠিন পীড়নে

নিদারুণ করুণ মূর্ছনা। দিত দেখা

দেবতার অশ্রুহীন চোখে জলরেখা

নিষ্কারণে। পতিপাশে বসি একাসনে

সহসা চাহিত শচী ইন্দ্রের নয়নে

যেন খুঁজি পিপাসার বারি। ধরা হতে

মাঝে মাঝে উচ্ছ্বসি আসিত বায়ুস্রোতে

ধরণীর সুদীর্ঘ নিশ্বাস — খসি ঝরি

পড়িত নন্দনবনে কুসুমমঞ্জরী।

 

 

থাকো স্বর্গ হাস্যমুখে, করো সুধাপান

দেবগণ। স্বর্গ তোমাদেরি সুখস্থান —

মোরা পরবাসী। মর্তভূমি স্বর্গ নহে,

সে যে মাতৃভূমি — তাই তার চক্ষে বহে

অশ্রুজলধারা, যদি দু দিনের পরে

কেহ তারে ছেড়ে যায় দু দণ্ডের তরে।

যত ক্ষুদ্র, যত ক্ষীণ, যত অভাজন,

যত পাপীতাপী, মেলি ব্যগ্র আলিঙ্গন

সবারে কোমল বক্ষে বাঁধিবারে চায় —

ধূলিমাখা তনুস্পর্শে হৃদয় জুড়ায়

জননীর। স্বর্গে তব বহুক অমৃত,

মর্তে থাক্‌ সুখে দুঃখে অনন্তমিশ্রিত

প্রেমধারা — অশ্রুজলে চিরশ্যাম করি

ভূতলের স্বর্গখণ্ডগুলি।

 

 

                        হে অপ্সরী ,

  তোমার নয়নজ্যোতি প্রেমবেদনায়

কভু না হউক ম্লান — লইনু বিদায়।