চিত্রা

         যে প্রদীপ জ্বলে তব শয্যাশিরোদেশে

         সারা সুপ্তনিশি, সুরনরস্বপ্নাতীত

         নিদ্রিত শ্রীঅঙ্গপানে স্থির অকম্পিত

         নিদ্রাহীন আঁখি মেলি — সে প্রদীপখানি

         আমি জ্বালাইয়া দিব গন্ধতৈল আনি।

         শেফালির বৃন্ত দিয়া রাঙাইব, রানী,

         বসন বাসন্তী রঙে। পাদপীঠখানি

         নব ভাবে নব রূপে শুভ-আলিম্পনে

         প্রত্যহ রাখিব অঙ্কি কুঙ্কুমে চন্দনে

         কল্পনার লেখা। নিকুঞ্জের অনুচর,

         আমি তব মালঞ্চের হব মালাকর।

রানী।     কী লইবে পুরস্কার।

ভৃত্য।                        প্রত্যহ প্রভাতে

           ফুলের কঙ্কণ গড়ি কমলের পাতে

           আনিব যখন, পদ্মের কলিকাসম

           ক্ষুদ্র তব মুষ্টিখানি করে ধরি মম

           আপনি পরায়ে দিব, এই পুরস্কার।

           আশোকের কিশলয়ে গাঁথি দিব হার

           প্রতি সন্ধ্যাবেলা, অশোকের রক্তকান্তে

           চিত্রি পদতল চরণ-অঙ্গুলিপ্রান্তে

           লেশমাত্র রেণু চুম্বিয়া মুছিয়া লব,

           এই পুরস্কার।

রানী।              ভৃত্য, আবেদন তব

          করিনু গ্রহণ। আছে মোর বহু মন্ত্রী,

          বহু সৈন্য, বহু সেনাপতি — বহু যন্ত্রী

          কর্মযন্ত্রে রত — তুই থাক্‌ চিরদিন

          স্বেচ্ছাবন্দী দাস, খ্যাতিহীন, কর্মহীন।

         রাজসভা-বহিঃপ্রান্তে রবে তোর ঘর —

          তুই মোর মালঞ্চের হবি মালাকর।