চিত্রা

        আমি তব মালঞ্চের হব মালাকর।

রানী।     ওরে তুই কর্মভীরু অলস কিংকর,

        কী কাজে লাগিবি?

ভৃত্য।                    অকাজের কাজ যত,

        আলস্যের সহস্র সঞ্চয়। শত শত

        আনন্দের আয়োজন। যে অরণ্যপথে

        কর তুমি সঞ্চরণ বসন্তে শরতে

        প্রত্যুষে অরুণোদয়ে, শ্লথ অঙ্গ হতে

        তপ্ত নিদ্রালসখানি স্নিগ্ধ বায়ুস্রোতে

        করি দিয়া বিসর্জন, সে বনবীথিকা

        রাখিব নবীন করি। পুষ্পাক্ষরে লিখা

        তব চরণের স্তুতি প্রত্যহ উষায়

        বিকশি উঠিবে তব পরশতৃষায়

        পুলকিত তৃণপুঞ্জতলে। সন্ধ্যাকালে

        যে মঞ্জু মালিকাখানি জড়াইবে ভালে

        কবরী বেষ্টন করি, আমি নিজ করে

        রচি সে বিচিত্র মালা সান্ধ্য যূথীস্তরে,

        সাজায়ে সুবর্ণ-পাত্রে তোমার সম্মুখে

        নিঃশব্দে ধরিব আসি অবনতমুখে —

        যেথায় নিভৃত কক্ষে ঘন কেশপাশ

        তিমিরনির্ঝরসম উন্মুক্ত-উচ্ছ্বাস

        তরঙ্গকুটিল এলাইয়া পৃষ্ঠ- ' পরে,

       কনকমুকুর অঙ্কে, শুভ্রপদ্মকরে

        বিনাইবে বেণী। কুমুদসরসীকূলে

        বসিবে যখন সপ্তপর্ণতরুমূলে

        মালতী-দোলায় — পত্রচ্ছেদ-অবকাশে

        পড়িবে ললাটে চক্ষে বক্ষে বেশবাসে

        কৌতূহলী চন্দ্রমার সহস্র চুম্বন,

        আনন্দিত তনুখানি করিয়া বেষ্টন

        উঠিবে বনের গন্ধ বাসনা-বিভোল

        নিশ্বাসের প্রায়, মৃদু ছন্দে দিব দোল

        মৃদুমন্দ সমীরের মতো। অনিমেষে