পুরাতন ভৃত্য
ভূতের মতন চেহারা যেমন,    নির্বোধ অতি ঘোর।
যা - কিছু হারায়, গিন্নি বলেন,    ‘ কেষ্টা বেটাই চোর। '
উঠিতে বসিতে করি বাপান্ত,    শুনেও শোনে না কানে।
যত পায় বেত না পায় বেতন,    তবু না চেতন মানে ।
বড়ো প্রয়োজন, ডাকি প্রাণপণ, চীৎকার করি ‘ কেষ্টা ' —
যত করি তাড়া, নাহি পাই সাড়া,    খুঁজে ফিরি সারা দেশটা
তিনখানা দিলে একখানা রাখে,    বাকি কোথা নাহি জানে —
একখানা দিলে নিমেষ ফেলিতে    তিনখানা ক ' রে আনে।
যেখানে সেখানে দিবসে দুপুরে    নিদ্রাটি আছে সাধা —
মহাকলরবে গালি দেই যবে    ‘ পাজি হতভাগা গাধা ' —
দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সে হাসে,     দেখে জ্বলে যায় পিত্ত!
তবু মায়া তার ত্যাগ করা ভার — বড়ো পুরাতন ভৃত্য।
 
ঘরের কর্ত্রী রুক্ষমূর্তি    বলে, ‘ আর পারি নাকো!
রহিল তোমার এ ঘর দুয়ার, কেষ্টারে লয়ে থাকো।
না মানে শাসন ; বসন বাসন    অশন আসন যত
কোথায় কী গেল! শুধু টাকাগুলো    যেতেছে জলের মতো।
গেলে সে বাজার সারা দিনে আর দেখা পাওয়া তার ভার —
করিলে চেষ্টা কেষ্টা ছাড়া কি    ভৃত্য মেলে না আর!
শুনে মহা রেগে ছুটে যাই বেগে,    আনি তার টিকি ধরে ;
বলি তারে, ‘ পাজি, বেরো তুই আজই,   দূর করে দিনু তোরে! '
ধীরে চলে যায়, ভাবি গেল দায় ;   পরদিনে উঠে দেখি
হুঁকাটি বাড়ায়ে রয়েছে দাঁড়ায়ে    বেটা বুদ্ধির ঢেঁকি।
প্রসন্নমুখ, নাহি কোনো দুখ, অতি - অকাতর চিত্ত!
ছাড়ালে না ছাড়ে, কী করিব তারে    মোর পুরাতন ভৃত্য।
 
সে বছরে ফাঁকা পেনু কিছু টাকা    করিয়া দালালগিরি।
করিলাম মন শ্রীবৃন্দাবন    বারেক আসিব ফিরি।
পরিবার তায় সাথে যেতে চায়,    বুঝায়ে বলিনু তারে
পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য,    নহিলে খরচ বাড়ে।