কাহিনী
লয়ে রশারশি করি কষাকষি পোঁটলাপুঁটলি বাঁধি
বলয় বাজায়ে বাক্স সাজায়ে গৃহিণী কহিল কাঁদি
,
‘ পরদেশে গিয়ে কেষ্টারে নিয়ে কষ্ট অনেক
পাবে। '
আমি কহিলাম ‘ আরে রাম রাম! নিবারণ সাথে
যাবে। '
রেলগাড়ি ধায় ; হেরিলাম হায় নামিয়া বর্ধমানে
কৃষ্ণকান্ত অতি প্রশান্ত তামাক সাজিয়া আনে
।
স্পর্ধা তাহার হেনমতে আর কত বা সহিব নিত্য!
যত তারে দুষি তবু হনু খুশি হেরি পুরাতন
ভৃত্য।
নামিনু শ্রীধামে, দক্ষিণে বামে পিছনে
সমুখে যত
লাগিল পান্ডা, নিমেষে প্রাণটা করিল
কণ্ঠাগত।
জন ছয় সাতে মিলি একসাথে
পরমবন্ধুভাবে
করিলাম বাসা, মনে হল আশা আরামে দিবস যাবে
।
কোথা ব্রজবালা! কোথা বনমালা! কোথা বনমালী
হরি!
কোথা হা হন্ত, চিরবসন্ত! আমি বসন্তে মরি
।
বন্ধু যে যত স্বপ্নের মতো বাসা ছেড়ে দিল
ভঙ্গ —
আমি একা ঘরে ব্যাধি - খরশরে ভরিল সকল অঙ্গ
।
ডাকি নিশিদিন সকরুণ ক্ষীণ, ‘ কেষ্ট, আয়
রে কাছে।
এত দিনে শেষে আসিয়া বিদেষে প্রাণ বুঝি নাহি
বাঁচে। '
হেরি তার মুখ ভরে ওঠে বুক, সে
যেন পরম বিত্ত।
নিশিদিন ধরে দাঁড়ায়ে শিয়রে মোর পুরতন ভৃত্য
।
মুখে দেয় জল, শুধায় কুশল, শিরে দেয় মোর
হাত ;
দাঁড়ায়ে নিঝুম, চোখে নাই ঘুম, মুখে নাই
তার ভাত।
বলে বার বার, ‘ কর্তা, তোমার কোনো ভয় নাই
, শুন,
যাবে দেশে ফিরে মাঠাকুরানীরে দেখিতে পাইবে
পুন। '
লভিয়া আরাম আমি উঠিলাম ; তাহারে ধরিল জ্বরে
—
নিল সে আমার কালব্যাধিভার আপনার দেহ - '
পরে।
হয়ে জ্ঞানহীন কাটিল দু দিন, বন্ধ হইল নাড়ী
—
এতবার তারে গেনু ছাড়াবারে, এতদিনে গেল ছাড়ি।
বহুদিন পরে আপনার ঘরে ফিরিনু সারিয়া তীর্থ
—
আজ সাথে নেই চিরসাথী সেই মোর পুরাতন ভৃত্য
।