ডাকঘর

মোড়ল। কেন রে? তোর খবর আমি রাজাকে জানিয়ে দেব —তিনি তা হলে আর দেরি করতে পারবেন না —তোমাদের খবর নেওয়ার জন্যে এখনই পাইক পাঠিয়ে দেবেন! —না, মাধব দত্তর ভারি আস্পর্ধা —রাজার কানে একবার উঠলে দুরস্ত হয়ে যাবে।

[ প্রস্থান

অমল। কে তুমি মল ঝম্‌ ঝম্‌ করতে করতে চলেছ —একটু দাঁড়াও-না ভাই।

বালিকার প্রবেশ

বালিকা। আমার কি দাঁড়াবার জো আছে! বেলা বয়ে যায় যে।

অমল। তোমার দাঁড়াতে ইচ্ছা করছে না —আমারও এখানে আর বসে থাকতে ইচ্ছা করে না।

বালিকা। তোমাকে দেখে আমার মনে হচ্ছে যেন সকালবেলাকার তারা —তোমার কী হয়েছে বলো তো।

অমল। জানি নে কী হয়েছে, কবিরাজ আমাকে বেরোতে বারণ করেছে।

বালিকা। আহা, তবে বেরিয়ো না —কবিরাজের কথা মেনে চলতে হয় —দুরন্তপনা করতে নেই, তা হলে লোকে দুষ্টু বলবে। বাইরের দিকে তাকিয়ে তোমার মন ছটফট করছে, আমি বরঞ্চ তোমার এই আধখানা দরজা বন্ধ করে দিই।

অমল। না, না, বন্ধ কোরা না —এখানে আমার আর-সব বন্ধ কেবল এইটুকু খোলা। তুমি কে বলো-না —আমি তো তোমাকে চিনি নে!

বালিকা। আমি সুধা।

অমল। সুধা?

সুধা। জান না? আমি এখানকার মালিনীর মেয়ে।

অমল। তুমি কী কর?

সুধা। সাজি ভরে ফুল তুলে নিয়ে এসে মালা গাঁথি। এখন ফুল তুলতে চলেছি।

অমল। ফুল তুলতে চলেছ? তাই তোমার পা দুটি অমন খুশি হয়ে উঠেছে – যতই চলেছ, মল বাজছে ঝম্‌ ঝম্‌ ঝম্‌। আমি যদি তোমার সঙ্গে যেতে পারতুম তা হলে উঁচু ডালে যেখানে দেখা যায় না সেইখান থেকে আমি তোমাকে ফুল পেড়ে দিতুম।

সুধা। তাই বৈকি! ফুলের খবর আমার চেয়ে তুমি নাকি বেশি জান!

অমল। জানি, আমি খুব জানি। আমি সাত ভাই চম্পার খবর জানি। আমার মনে হয়, আমাকে যদি সবাই ছেড়ে দেয় তা হলে আমি চলে যেতে পারি খুব ঘন বনের মধ্যে যেখানে রাস্তা খুঁজে পাওয়া যায় না। সরু ডালের সব-আগায় যেখানে মনুয়া পাখি বসে বসে দোলা খায় সেইখানে আমি চাঁপা হয়ে ফুটতে পারি। তুমি আমার পারুলদিদি হবে?

সুধা। কী বুদ্ধি তোমার! পারুলদিদি আমি কী করে হব! আমি যে সুধা —আমি শশী মালিনীর মেয়ে। আমাকে রোজ এত এত মালা গাঁথতে হয়। আমি যদি তোমার মতো এইখানে বসে থাকতে পারতুম তা হলে কেমন মজা হত!

অমল। তা হলে সমস্ত দিন কী করতে?

সুধা। আমার বেনে-বউ পুতুল আছে, তার বিয়ে দিতুম। আমার পুষি মেনি আছে, তাকে নিয়ে —যাই, বেলা বয়ে যাচ্ছে, দেরি হলে ফুল আর থাকবে না।

অমল। আমার সঙ্গে আর-একটু গল্প করো-না, আমার খুব ভালো লাগছে।