ছন্দের মাত্রা

পুনর্বার বলি যে, যে-বিরামস্থলে পৌঁছিয়ে পদ্যছন্দ অনুরূপ ভাগে পুনরাবর্তন করে সেইপর্যন্ত এসে তবেই কোন্‌টা কোন্‌ ছন্দ এবং তার মাত্রার পরিমাণ কত তার নির্ণয় সম্ভব, মাঝখানে কোনো একটা জোড়ের মুখে গণনা শেষ করা অসংগত। সংস্কৃত বা প্রাকৃত ছন্দশাস্ত্রে এই নিয়মেরই অনুসরণ করা হয়। দৃষ্টান্ত–

পৈঙ্গল-ছ ন্ দঃসূত্রাণি

ভংজিঅ মলঅচোলবই ণিবলিঅ

গংজিঅ গুজ্জরা।

মালবরাঅ মলঅগিরি লুক্কিঅ

পরিহরি কুংজরা।

খুরাসাণ খুহিঅ রণমহ মুহিঅ

লংঘিঅ সাঅরা।

হম্মীর চলিঅ হারব পলিঅ

রিউগণহ কাঅরা॥

গ্রন্থকার বলছেন ‘বিংশত্যক্ষরাণি’ এবং ‘পঞ্চবিংশতিমাত্রাঃ’ প্রতিপাদং দেয়াঃ’। এর পদে পদে কুড়িটি অক্ষর ও পঁচিশটা মাত্রা, ছত্রের এই পরিচয়।

পঢ়ম দহ দিজ্জিআ

পুণবি তহ কিজ্জিআ

পুণবি দহ সত্ত তহ বিরই জাআ।

এম পরি বিবিহু দল

মত্ত সততীস পল

এহু কহ ঝুল্লণা ণাঅরাআ॥

ভাষ্যকারের ব্যাখ্যা এই : প্রথমং দশমাত্রা দীয়ন্তে। অর্থাৎ তত্র বিরতিঃ ক্রিয়তে। পুনরপি তথা কর্তব্যা। পুনরপি সপ্তদশমাত্রাসু বিরতির্জাতা চ। অনয়ৈব রীত্যা দলদ্বয়েপি মাত্রাঃ সপ্তত্রিংশৎ পতন্তি। এমনি করে দলগুলিকে মিলিয়ে যে ছন্দের সাঁইত্রিশ মাত্রা ‘তামিমাং নাগরাজঃ পিঙ্গলো ঝুল্লণামিতি কথয়তি’। আমি যাকে ছন্দোবিশেষের রূপকল্প বা প্যাটার্‌ন্‌ বলছি ‘ঝুল্লণা’ ছন্দে সেইটে সাঁইত্রিশ মাত্রায় সম্পূর্ণ, তারপরে তার অনুরূপ পুনরাবৃত্তি। অমূল্যবাবু হয়তো এর কলাগুলির প্রতি লক্ষ্য রেখে একে পাঁচ বা দশমাত্রার ছন্দ বলবেন, কিন্তু পাঁচ বা দশমাত্রায় এর পদের সম্পূর্ণতা নয়।

যার ভাগগুলি অসমান এমন ছন্দ দেখা যাক–

কুংতঅরু ধণুদ্ধরু

হঅবর গঅবরু

ছক্কলু বিবি পা-

ইক্ক দলে।

এই ছন্দ সম্বন্ধে বলা হয়েছে ‘দ্বাত্রিংশন্মাত্রাঃ পাদে সুপ্রসিদ্ধাঃ’। এই ছন্দকে বাংলায় ভাঙতে গেলে এইরকম দাঁড়ায়।