বিসর্জন

জয়সিংহ।             এই নারী-অভিমান তোর?

অপর্ণা।      অভিমান কিছু নাই আর। জয়সিংহ,

তোমার বেদনা, আমার সকল ব্যথা

সব গর্ব চেয়ে বেশি। কিছু মোর নাই

অভিমানে।

জয়সিংহ।             তবে আমি যাই। মুখ তোর

দেখিব না, যতক্ষণ রহিবি হেথায়।–

চলে যা অপর্ণা!

অপর্ণা।               নিষ্ঠুর ব্রাহ্মণ, ধিক্‌

থাক্‌ ব্রাহ্মণত্বে তব। আমি ক্ষুদ্র নারী

অভিশাপ দিয়ে গেনু তোরে, এ বন্ধনে

জয়সিংহে পারিবি না বাঁধিয়া রাখিতে।

[ প্রস্থান

রঘুপতি।     বৎস, তোলো মুখ, কথা কও একবার!

প্রাণপ্রিয় প্রাণাধিক, আমার কি প্রাণে

অগাধ সমুদ্রসম স্নেহ নাই! আরো

চাস? আমি আজন্মের বন্ধু, দু দণ্ডের

মায়াপাশ ছিন্ন হয়ে যায় যদি, তাহে

এত ক্লেশ।

জয়সিংহ।          থাক্‌ প্রভু, বোলো না স্নেহের

কথা আর! কর্তব্য রহিল শুধু মনে।

স্নেহপ্রেম তরুলতাপত্রপুষ্পসম

ধরণীর উপরেতে শুধু, আসে যায়

শুকায় মিলায় নব নব স্বপ্নবৎ।

নিম্নে থাকে শুষ্ক রূঢ় পাষাণের স্তূপ

রাত্রিদিন, অনন্ত হৃদয়ভারসম।

[ প্রস্থান

রঘুপতি।     জয়সিংহ, কিছুতে পাই নে তোর মন,

এত যে সাধনা করি নানা ছলে-বলে।

[ প্রস্থান