কাহিনী

অরণ্যের পতঙ্গ অবধি, মিলাইছে এক স্রোতে

সংগীতের তরঙ্গিণী বৈকুণ্ঠের শান্তিসিন্ধুপারে।

মানুষের ভাষাটুকু অর্থ দিয়ে বদ্ধ চারি ধারে,

ঘুরে মানুষের চতুর্দিকে। অবিরত রাত্রিদিন

মানবের প্রয়োজনে প্রাণ তার হয়ে আসে ক্ষীণ।

পরিস্ফুট তত্ত্ব তার সীমা দেয় ভাবের চরণে ;

ধূলি ছাড়ি একেবারে ঊর্ধ্বমুখে অনন্ত গগনে

উড়িতে সে নাহি পারে সংগীতের মতন স্বাধীন

মেলি দিয়া সপ্তসুর সপ্তপক্ষ অর্থভারহীন।

প্রভাতের শুভ্র ভাষা বাক্যহীন প্রত্যক্ষ কিরণ

জগতের মর্মদ্বার মুহূর্তেকে করি উদ্‌ঘাটন।

নির্বারিত করি দেয় ত্রিলোকের গীতের ভাণ্ডার ;

যামিনীর শান্তিবাণী ক্ষণমাত্রে অনন্ত সংসার

আচ্ছন্ন করিয়া ফেলে, বাক্যহীন পরম নিষেধ

বিশ্বকর্মা-কোলাহল মন্ত্রবলে করি দিয়া ভেদ

নিমেষে নিবায়ে দেয় সর্ব খেদ সকল প্রয়াস,

জীবলোক-মাঝে আনে মরণের বিপুল আভাস ;

নক্ষত্রের ধ্রুব ভাষা অনির্বাণ অনলের কণা

জ্যোতিষ্কের সূচীপত্রে আপনার করিছে সূচনা

নিত্যকাল মহাকাশে ; দক্ষিণের সমীরের ভাষা

কেবল নিশ্বাসমাত্রে নিকুঞ্জে জাগায় নব আশা,

দুর্গম পল্লবদুর্গে অরণ্যের ঘন অন্তঃপুরে

নিমেষে প্রবেশ করে, নিয়ে যায় দূর হতে দূরে

যৌবনের জয়গান — সেইমত প্রত্যক্ষ প্রকাশ

কোথা মানবের বাক্যে, কোথা সেই অনন্ত আভাস,

কোথা সেই অর্থভেদী অভ্রভেদী সংগীত-উচ্ছ্বাস,

আত্মবিদারণকারী মর্মান্তিক মহান নিশ্বাস?

মানবের জীর্ণ বাক্যে মোর ছন্দ দিবে নব সুর,

অর্থের বন্ধন হতে নিয়ে তারে যাবে কিছু দূর

ভাবের স্বাধীন লোকে, পক্ষবান্‌ অশ্বরাজ-সম

উদ্দাম-সুন্দর-গতি — সে আশ্বাসে ভাসে চিত্ত মম।

সূর্যেরে বহিয়া যথা ধায় বেগে দিব্য অগ্নিতরী